দ্বিতীয় মত: মৃতরা জীবিতদের কথা শুনতে পায় না | বদরের যুদ্ধ-৫ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

দ্বিতীয় মত: মৃতরা জীবিতদের কথা শুনতে পায় না | বদরের যুদ্ধ-৫, অন্যদিকে ‘মৃতরা জীবিতদের কথা শুনতে পায় না’ এই মতের পক্ষে আছেন আয়েশা (রা), উমর (রা), কাতাদা, আল-বায়হাকি, আল-শাওকানি, আল-আলবানি, ইবনে আতিয়া, ইবনে আল-জাওজি, ইবনে কুদামা, আল-সুহেলি, আল-কাদি আৰু ইয়াআলা আল-হানবালি প্রমুখ পণ্ডিত। তাহলে মৃতরা জীবিতদের কথা শুনতে পাওয়ার পক্ষে যে হাদিসগুলো আছে সেগুলোর ব্যাপারে এই পক্ষের ব্যাখ্যা কী?

 

দ্বিতীয় মত: মৃতরা জীবিতদের কথা শুনতে পায় না | বদরের যুদ্ধ-৫ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

দ্বিতীয় মত: মৃতরা জীবিতদের কথা শুনতে পায় না | বদরের যুদ্ধ-৫ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

১. তাঁদের মতে, এটি ঠিক যে ‘মাওতা’ অর্থ ‘কাফের’ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে, কিন্তু এই আয়াতগুলোতে তা ‘মৃত’ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, কারণ কোরানের [৩৫:22] আয়াতটিতে ‘কবর’ কথাটির সুস্পষ্ট উল্লেখ আছে। ২. ‘শোনা’ বলতে ‘যা তাদের উপকারে আসবে’ বোঝানো হয়েছে—এই মত তাঁরা পবিত্র কোরানের এই আয়াতের মাধ্যমে খণ্ডন করেছেন:

“তোমরা তাদের ডাকলে তারা তোমাদের ডাক শুনবে না, আর শুনলেও সে ডাকে সাড়া দেবে না।” [সুরা ফাতির, ৩৫:১৪] এ প্রসঙ্গে স্মরণ করুন, জাহেলি যুগে আরবরা যেসব ঈশ্বরের উপাসনা করত, তারা সবাই এক সময় মানুষই ছিল; যেমন: লাত, উজ্জা, মানাত ইত্যাদি ।

 

islamiagoln.com google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

৩. এই মত অনুসারে বদরের যুদ্ধের ঘটনাটিই মৃতরা জীবিতদের কথা না শোনার ব্যাপারে সবচেয়ে বড় তথ্যপ্রমাণ। উমর (রা) জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘হে আল্লাহর রসুল, আপনি কীভাবে তাদের সাথে কথা বলছেন যাদের দেহে আত্মা/প্রাণ নেই?’

এ কথা শুনে নবিজি (সা) কিন্তু তাঁর ভুল শুধরে দেননি, বরং তিনি এমনভাবে উত্তর দিয়েছিলেন যাতে মনে হয় যে ঘটনাটি ছিল একটি ব্যতিক্রম মাত্র। তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন, ‘হে উমর, এই মুহূর্তে এই ব্যক্তিরা আমার কথা শুনতে পাচ্ছে যেমন তুমি পাচ্ছ। সুতরাং নবিজি (সা) এখানে একটি বিশেষ সময়, স্থান এবং ব্যক্তিদের ব্যাপারে কথাটি বলেছিলেন। তিনি কিন্তু বলেননি, উমর, তুমি কেন এটি জিজ্ঞেস করছ? তুমি কি জানো না যে মৃতরা জীবিতদের কথা শুনতে  পায়? এ থেকে এটি পরিষ্কার যে, উমর (রা) এ বিষয়ে কোরানের মর্মার্থ সঠিকভাবেই বুঝতে পেরেছিলেন। নবিজিও (সা) তাঁকে ভুল শুধরে দেননি, কারণ সেখানে ভুল বোঝার কিছু ছিল না।

৪. পায়ের শব্দ শুনতে পাওয়ার হাদিসটির ব্যাপারে ব্যাখ্যা: যেমনটি উপরে উল্লেখ করেছি, এটি একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা যা বিশেষ একটি সময় ও স্থানে একটি মৃতদেহ সমাহিত করার সময়ে ঘটেছিল। হাদিসে আছে, মুনকার ও নাকিরের প্রশ্নের জবাব দেওয়ার জন্য মানুষের ‘রুহ’ বা আত্মা তার দেহের সঙ্গে আবার একত্রিত হয়। নবিজি (সা) আসলে আমাদের বলছেন: মুনকার ও নাকিরের প্রশ্ন করার সময় মৃত ব্যক্তি তার কবর জিয়ারতকারীর চলে যাওয়ার পথে পায়ের শব্দ শুনতে পায়। এখানে কোনো কথোপকথন হচ্ছে না, শুধুই পায়ের শব্দ শুনতে পাওয়ার কথা বলা হচ্ছে।

 

দ্বিতীয় মত: মৃতরা জীবিতদের কথা শুনতে পায় না | বদরের যুদ্ধ-৫ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

৫. বাকি আল-ঘরকাদ জিয়ারত করার সময় সেখানকার সব কবরবাসীর উদ্দেশ্যে নবিজির (সা) সালাম দেওয়ার বিষয়টির ব্যাপারে ব্যাখ্যা হলো: এটি ছিল মৃত ব্যক্তিদের দোয়া করার উদ্দেশ্যে সালাম, তাদের অভিবাদন জানাবার উদ্দেশ্যে নয়। আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে যখন বলি ‘আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক’, তখন এটি দোয়া ও অভিবাদন দুই ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়। দ্বিতীয় মতের পণ্ডিতদের মতে, এই হাদিসটি থেকেও প্রমাণিত হয় না যে মৃতরা শুনতে পায় ।

৬. মৃত ব্যক্তিরা জীবিতদের সালাম শুনতে পায়—এই হাদিসটিকে বেশির ভাগ পণ্ডিতই দুর্বল বলে গণ্য করেন। ৭. আমর ইবনুল আস তাঁর সন্তানদের কাছে কী ইচ্ছা ব্যক্ত করেছিলেন তা একান্তই তাঁর নিজস্ব ধারণাপ্রসূত। নবিজি (সা) তাঁকে এটি করতে বলেননি।

৮. নবিজির (সা) কাছে তাঁর কবরে ফেরেশতাদের মাধ্যমে উম্মাহর সালাম পৌঁছে দেওয়ার ব্যাপারে ব্যাখ্যা হলো: একজন ফেরেশতা গিয়ে তাঁর কাছে সালাম পৌঁছানোর ব্যাপারটির মধ্যেই নিহিত আছে যে নবিজি (সা) মৃত্যুর পরে শুনতে পান না। যদি তিনি সত্যিই শুনতে পেতেন, তাহলে সালাম পৌঁছানোর জন্য ফেরেশতার প্রয়োজন হতো না।

আরও পড়ুনঃ

Leave a Comment