প্রথম মতঃ মৃতেরা জীবিতদের কথা শুনতে পায় | বদরের যুদ্ধ-৫, আল-নওয়াবি, ইবনে কাসির, ইবনে তাইমিয়া, ইবনে হাজম, ইবনে আল- কাইয়িম, আল-সুয়ুতি ও আল-শানকিতিসহ অনেক পণ্ডিত মনে করেন, মৃত ব্যক্তিরা তাদের কবর জিয়ারতকারীদের কথা শুনতে পান। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য, যারা কবর জিয়ারত করবে শুধু তাদের কথাই বলা হয়েছে, অন্য কারও নয়। এই দলের পণ্ডিতদের মত অনুসারে, আপনি যদি কবরের পাশে গিয়ে কোনো কবরবাসীকে উদ্দেশ্য করে সালাম দেন তবে সে জানতে পারবে যে অমুক তাকে সালাম দিয়েছে।

প্রথম মতঃ মৃতেরা জীবিতদের কথা শুনতে পায় | বদরের যুদ্ধ-৫ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
এই মতের পক্ষে মূল যে তথ্যপ্রমাণটি ব্যবহার করা হয় তা হলো বদরে নবিজির (সা) মৃতদের সাথে সেই কথোপকথনের ঘটনা, যেখানে নবিজি (সা) উমরকে বলেছিলেন, এই মুহূর্তে তারা আমার কথা যতটা শুনতে পাচ্ছে, তুমি তার চেয়ে ভালো শুনতে পাচ্ছ না।’ এটি খুবই স্পষ্ট একটি প্রামাণিক তথ্য যা এই মতের পক্ষের পণ্ডিতেরা ব্যবহার করেন। তাহলে কোরানের আয়াতগুলোর (যেখানে বলা আছে যে মৃতরা শুনতে পায় না) ব্যাপারে এই পণ্ডিতদের ব্যাখ্যা কী?

১. তাঁদের মতে, কোরানের ওই আয়াতগুলোতে ব্যবহৃত ‘শুনতে পাওয়া’ অর্থ নিজের কান দিয়ে শোনা নয় বরং এখানে ‘শোনা’ বলতে বোঝানো হয়েছে ‘যা তাদের উপকারে লাগবে’। এই প্রসঙ্গে তাঁরা কোরানের আরেকটি আয়াতও উল্লেখ করে থাকেন:
“তুমি অন্ধদের ভুল পথ থেকে সঠিক পথে আনতে পারবে না। যারা আমার আয়াতের ওপর ইমান আনে, তারাই তোমার কথা শুনবে।” [সুরা নামল, ২৭:৮১]। উপরোক্ত আয়াতে ‘শুনবে’ বলতে বোঝানো হয়েছে ‘ইসলাম অনুসরণ করবে এবং এর মাধ্যমে উপকৃত হবে’, কান দিয়ে ‘শ্রবণ’ অর্থে নয় । ২. তাঁদের মতে, পবিত্র কোরানে উল্লিখিত মৃত বলতে ‘শারীরিকভাবে মৃত’ নয়, বরং ‘আত্মিকভাবে মৃত’ অর্থে বোঝানো হয়েছে। কোরানের [২৭:80] ও [৩০:৫২] আয়াতে ‘আল-মাওতা’ বলতে এমন ব্যক্তিকে বোঝানো হয়েছে যে কাফের। অন্য এক আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন:
“যে লোক মৃত ছিল, যাকে আমি পরে জীবিত করেছি আর যাকে মানুষের মধ্যে চলার জন্য আলো দিয়েছি, সেই লোকটি কি ওই লোকের মতো যে অন্ধকারে রয়েছে আর সে জায়গা থেকে বের হতে পারছে না?” [সুরা আনআম, ৬:১২২] উপরোক্ত আয়াতে মৃত ও জীবিত বলতে যথাক্রমে কুফর ও ইসলামকে বোঝানো হয়েছে। সুতরাং আল্লাহ কাফেরদের মৃত (‘মায়িত’) বলে উল্লেখ করেছেন। এই মতের পণ্ডিতেরা এভাবে আয়াতটির অর্থ বা ব্যাখ্যা করেছেন: ‘তুমি কাফেরদের তোমার কথা শোনাতে পাবে না।’ কিন্তু উপরের ব্যাখ্যাগুলোর পরেও সুরা ফাতিরের [30:22 | আয়াতের যথাযথ ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না, যেখানে আল্লাহ তায়ালা স্পষ্টভাবে বলেছেন: “যারা কবরে রয়েছে তাদের তো তুমি শোনাতে পারবে না।”
আরও পড়ুনঃ