রক্তমূল্য ব্লাড মানি | বনু নাদিরের বহিষ্কার, ইহুদি গোত্র বনু নাদিরকে বহিষ্কারের ঘটনাটি ঘটেছিল হিজরতের ৪র্থ বছরের সফর মাসে, আল-রাজি এবং বির মাউনার পরে, আহজাবের যুদ্ধের ঠিক আগে। ।
রক্তমূল্য ব্লাড মানি | বনু নাদিরের বহিষ্কার | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

রক্তমূল্য (‘ব্লাড মানি’)
আমর ইবনে উমাইয়া ছিলেন একমাত্র সাহাবি যিনি বির মাউনার গণহত্যার সময় প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন। তিনি ফেরার পথে যে দুজন লোককে হত্যা করেছিলেন তারা ছিল প্রকৃতপক্ষেই নির্দোষ। ফলে নবিজি (সা) ওই দুজনের জন্য বেশ বড়ো অঙ্কের রক্তমূল্য বা ‘ব্লাড মানি’ পরিশোধ করেন: প্রতিজনের জন্য ১০০ উট। অর্থাৎ দুজনের জন্য ২০০ উট। এই ঘটনার পটভূমি আমরা ৫১তম পর্বে আলোচনা করেছি।
মদিনার সংবিধান অনুসারে, যদি শহরে কোনো সমস্যা হয়, তাহলে সবাইকে তা সমাধানের জন্য এগিয়ে আসতে হবে। ফলে ৩০০-৪০০ লোকের পক্ষে ২০০ উটের ব্যবস্থা করা কঠিন ছিল না। ইসলামি আইন অনুসারে, দুর্ঘটনাবশত কোনো হত্যাকাণ্ড ঘটলে রক্তমূল্য পরিশোধ করতে হবে এবং দুই মাস রোজা রাখতে হবে। নিয়ম অনুসারে সম্মিলিত কোষাগার থেকে গোত্রের সবাই এই রক্তমূল্যের জোগান দেবে। তবে ইচ্ছাকৃত হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রে শুধু হত্যাকারীকেই এর দায় নিতে হতো; অর্থাৎ তাকেই রক্তমূল্যের পুরোটা পরিশোধ করতে হতো।

দুর্ঘটনাবশত হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রে গোত্রের সঙ্গে ব্যক্তিকেও রক্তমূল্যের কিছু অংশ বহন করতে হতো। গোত্র কত অংশ দেবে আর ব্যক্তি কত অংশ দেবে সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার ছিল গোত্রের নেতাদের ওপর। নেতারা হত্যাকারীর অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে বিষয়টার ফয়সালা করতেন। ওই দুজন নির্দোষ ব্যক্তিকে হত্যার জন্য মদিনা শহরের সবার কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করা শুরু হয়। যেহেতু ইহুদি উপজাতি বনু নাদির আর্থিকভাবে বেশ সচ্ছল ছিল, তাই মদিনা সংবিধান অনুসারে নবিজি (সা) বনু নাদিরকে রক্তমূল্য পরিশোধের জন্য অংশ নিতে বলেন।
মুসলিম ও বনু নাদিরের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন
বনু নাদিরের সঙ্গে মুসলিমদের আগে থেকেই কিছু সমস্যা ছিল। যথা:
(ক) আব্দুর রাজ্জাকের ‘মুসান্নাফে’ বর্ণিত আছে, বনু নাদিরের কিছু লোক সুফ্ফার আলেমদের হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল। তাদের একজন এই ষড়যন্ত্রের কথা মুসলিমদের কাছে ফাঁস করে দেয়। ফলে ব্যাপারটি আর এগোয়নি।
(খ) প্রাথমিক যুগের অন্যতম সিরাহ লেখক মুসা ইবনে উকবা বর্ণনা করেছেন, ওহুদের যুদ্ধের সময় বনু নাদির কুরাইশদের বিভিন্ন জিনিসপত্র দিয়ে এবং বিভিন্ন তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছিল।
(গ) কাব ইবনুল আশরাফের হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করেও মুসলিমদের সঙ্গে বনু নাদিরের সম্পর্কের অবনতি হয়েছিল। এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে আমরা ৪৪তম পর্বে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। সম্পর্কের এমন টানাপোড়েনের কারণে বনু নাদিরকে রক্তমূল্য পরিশোধে অংশ নিতে বলার ব্যাপারে মুসলিমরা কিছুটা দ্বিধান্বিত ছিলেন। নবিজি (সা) বিশিষ্ট সাহাবিদের সঙ্গে পরামর্শ করে বনু নাদিরের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করার সিদ্ধান্ত নেন ।
আরও পড়ুনঃ