রিদওয়ানের অঙ্গীকার (‘বায়াতুল রিদওয়ান’) | হুদায়বিয়ার সন্ধি (চুক্তি)-৩ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

রিদওয়ানের অঙ্গীকার (‘বায়াতুল রিদওয়ান’) | হুদায়বিয়ার সন্ধি (চুক্তি)-৩, একটি ঘোষণার মাধ্যমে সাহাবিদের জানানো হলো, জিব্রাইল (আ) সব মুসলিমকে বলছেন, তাঁরা যেন নবি করিমের (সা) কাছে আনুগত্য প্রকাশ করে অঙ্গীকার (বাইয়াত) করেন। অবশ্যই আল্লাহ ভালো জানেন উসমান (রা) বেঁচে আছেন।

রিদওয়ানের অঙ্গীকার (‘বায়াতুল রিদওয়ান’) | হুদায়বিয়ার সন্ধি (চুক্তি)-৩ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

রিদওয়ানের অঙ্গীকার ('বায়াতুল রিদওয়ান') | হুদায়বিয়ার সন্ধি (চুক্তি)-৩ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

কিন্তু তিনি (আল্লাহ) এ ক্ষেত্রে মুমিনদের পরীক্ষা করছেন তাঁরা নবিজির (সা) কাছে আনুগত্যের অঙ্গীকার করেন কি না। অঙ্গীকারটি ছিল, কুরাইশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে, পিছু হটা চলবে না। এই অঙ্গীকারকে রিদওয়ানের অঙ্গীকার (‘বায়াতুল রিদওয়ান’) বলা হয়। ‘রিদওয়ান’ অর্থ আনন্দ। একে ‘আনন্দের অঙ্গীকার’ বলার কারণ আমরা পাই সুরা আল ফাতহের একটি আয়াত থেকে: “মুমিনরা যখন গাছের নিচে তোমার কাছে তোমার আনুগত্যের অঙ্গীকার করল তখন আল্লাহ তাঁদের ওপর সত্যিই সন্তুষ্ট ছিলেন।

তাঁদের অন্তরে যা ছিল তিনি তা জানতেন। তাঁদের তিনি প্রশান্তি দান করলেন। আর তাঁদের জন্য স্থির করলেন আসন্ন বিজয়।” [সুরা ফাতহ, ৪৮:১৮] নবি করিম (সা) একটি গাছের নিচে বসে আছেন। সেখানে একে একে সব সাহাবি এসে তাঁর কাছে আনুগত্যের অঙ্গীকার করলেন। কিন্তু একজন মুনাফেক অঙ্গীকার করল না । সে তার উটের পেছনে লুকিয়ে রইল। কেউ কেউ বলেন, এই সেই ব্যক্তি যে লাল উটের মালিক ছিল (৬৩তম পর্বে বর্ণনা আছে)।

সব সাহাবির অঙ্গীকার করা শেষ হলে নবিজি (সা) সবার সামনে নিজের বাম হাতটি ডান হাতের ওপর রেখে বললেন, “এটি উসমানের জন্য।” অর্থাৎ তিনি উসমান ইবনে আফফানের (রা) পক্ষে অঙ্গীকার করলেন। তাঁর বাম হাতটি উসমান ইবনে আফফানের (রা) হাতের প্রতীক । এই হলো রিদওয়ানের অঙ্গীকার। এই ঘটনা থেকে আমরা সাহাবিদের অসীম সাহসিকতার ও দৃঢ় ইমানের প্রমাণ পাই। তাঁরা ছিলেন নিরস্ত্র ও প্রতিরক্ষাহীন, অনেকদিনের ভ্রমণে ক্লান্ত। তবু তাঁরা মানসিকভাবে সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত ছিলেন, তাঁদের চেয়ে তিনগুণ বড় একটি শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লড়াই করতে ইচ্ছুক ছিলেন। এ কারণেই সেদিন যাঁরা নবিজির (সা) কাছে আনুগত্যের অঙ্গীকার করেছিলেন দলগতভাবে তাঁদের মর্যাদা বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের পরে দ্বিতীয় স্থানে। এর পক্ষে বেশ কিছু আয়াত ও হাদিস আছে ।

 

islamiagoln.com google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

‘তাঁদের অন্তরে যা ছিল তিনি তা জানতেন’—তাঁরা যে কাপুরুষ ছিলেন না সে বিষয়ে আল্লাহর এই সাক্ষ্যের উপরে আর কী হতে পারে! আল্লাহ জানতেন যে তাঁদের হৃদয়-মন তাঁর জন্য যুদ্ধ করতে প্রস্তুত, তাই ‘তাঁদের তিনি প্রশান্তি দান করলেন।’ তিনি বলেন যে তাঁরা যখন নবিজির (সা) হাতের ওপর হাত রেখে অঙ্গীকার করছিলেন তখন ‘আল্লাহর হাত ছিল তাঁদের হাতের ওপরে।’ [৪৮:১০] সাহাবিদের জন্য এ ছিল বিরাট সম্মানের বিষয়।

আনুগত্যের অঙ্গীকারের পর নবিজি (সা) তাঁদের উদ্দেশ্যে বলেন, “তোমরা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ।” সহিহ মুসলিমে বর্ণিত একটি হাদিস অনুসারে, তিনি মদিনায় ফিরে যাওয়ার পর বলেছিলেন, “রিদওয়ানের অঙ্গীকারকারীগণের কেউ কখনও জাহান্নামের আগুনে প্রবেশ করবে না।” আল্লাহ এই সুসংবাদও দিয়েছিলেন যে তিনি লোকদের একটি বিজয় দেওয়ার পাশাপাশি গনিমতের অনেক সম্পদ দেবেন [৪৮:১৮-১৯]। আমরা ৬৮তম পর্বে দেখব, আল্লাহ উপরোক্ত আয়াতে যে বিজয়ের কথা বলেছেন তা সপ্তম হিজরিতে সংঘটিত খায়বার যুদ্ধের বিজয়। খায়বারে প্রাপ্ত গনিমতের সম্পদ ছিল ইসলামের ইতিহাসে সেই সময় অবধি সবচেয়ে বড় আর্থিক প্রাপ্তি ।

 

রিদওয়ানের অঙ্গীকার ('বায়াতুল রিদওয়ান') | হুদায়বিয়ার সন্ধি (চুক্তি)-৩ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

আপনি যখন আল্লাহর জন্য নিজেকে সমর্পণ করবেন, তখন তিনি আপনাকে পরকালের আগে এই দুনিয়াতেও অনেক কিছু দেবেন। আমরা সারা সিরাহ জুড়ে এই বিষয়টি অনেকবার দেখেছি। বদরের যুদ্ধের সময় আল্লাহ বলেছিলেন, তিনি মুসলিমদের দুটি জিনিসের মধ্যে একটি দেবেন: বিজয় অথবা কাফেলা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দুটিই দিয়েছিলেন। এখানে রিদওয়ানের অঙ্গীকারের সময়ও সাহাবিরা আন্তরিকতা দেখালেন বলে ফেরার পথেই আল্লাহ তাঁদের জানিয়ে দিলেন, “মুমিনরা যখন গাছের নিচে তোমার কাছে তোমার আনুগত্যের অঙ্গীকার করল তখন আল্লাহ তাঁদের ওপর সত্যিই সন্তুষ্ট ছিলেন।’ [৪৮:১৮] অন্যদিকে উসমান ইবনে আফফানের (রা) সম্মানের বিষয়টিও দেখুন। নিঃসন্দেহে নবিজির (সা) হাতে হাত রেখে আনুগত্য প্রদর্শন করা ছিল সব সাহাবির জন্য সম্মানের বিষয়। কিন্তু উসমানের (রা) সম্মান ছিল আরও বেশি, কারণ নবিজির (সা) নিজের হাত উসমানের (রা) প্রতিনিধিত্ব করেছিল ।

আরও পড়ুনঃ

Leave a Comment