রোমান বনাম পার্সিয়ান যুদ্ধ | বদরের যুদ্ধ-৭, তিরমিজিতে উল্লেখ আছে, যেদিন বদরের যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল, ঠিক সেই দিনে বহু শত মাইল দূরে বাইজেন্টাইন রোমান এবং সাসানীয় পার্সিয়ানদের মধ্যেও যুদ্ধ চলছিল। সে যুদ্ধের ফলাফল ছিল একদমই অপ্রত্যাশিত। রোমানরা প্রথম দিকে কিছুটা বেকায়দায় থাকলেও শেষে পার্সিয়ানদের খুব বাজেভাবে পরাজিত করে। এর কয়েক বছর আগেও তাদের মধ্যে একটি বড় ধরনের যুদ্ধ হয়েছিল। সেটি ছিল দাওয়াতের ৬ষ্ঠ/৭ম বছরে, মক্কার আমলের মাঝামাঝি সময়ে। সেই সময় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা সুরা রুমের প্রথম কয়েক আয়াত নাজিল করে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে বহু শত মাইল দূরে মক্কায় মুসলিমদের জানিয়ে দিয়েছিলেন:

রোমান বনাম পার্সিয়ান যুদ্ধ | বদরের যুদ্ধ-৭ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
“আলিফ-লাম-মিম। রোমানরা পরাজিত হয়েছে, নিকটবর্তী অঞ্চলে। কিন্তু ওরা ওদের এ পরাজয়ের পর শীঘ্রই জয়লাভ করবে, কয়েক বছরের মধ্যেই। অগ্র ও পশ্চাতের সিদ্ধান্ত আল্লাহরই। সেদিন মুমিনরা উৎফুল্ল হবে, আল্লাহর সাহায্যে। তিনি যাকে ইচ্ছা সাহায্য করেন, আর তিনি পরাক্রমশালী, পরম দয়ালু।” (৩০:১-৫) এখানে “রোমানরা পরাজিত হয়েছে’ বলতে আল্লাহ তায়ালা ইতিমধ্যে সংঘটিত একটি যুদ্ধকে বুঝিয়েছেন যেখানে রোমানরা পরাজিত হয়েছিল। তবে আল্লাহ বলেন, ‘এ পরাজয়ের পর শীঘ্রই জয়লাভ করবে, কয়েক বছরের মধ্যেই’।

সুবহানআল্লাহ। এটি সমগ্র কোরানের অন্যতম স্পষ্ট ভবিষ্যদ্বাণী। অধিকন্তু, ‘সেদিন মুমিনরা উৎফুর হবে, আল্লাহর সাহায্যে’। এই সুরাটি নাজিল হওয়ার পর উবাই ইবনে খালাফ আবু বকরকে (রা) উপহাস করে বলেছিল, “আপনি কি সত্যিই মনে করেন, এমন নির্মম পরাজয়ের পরেও রোমানরা পার্সিয়ানদের পরাজিত করতে পারবে?”
আবু বকর: হ্যাঁ, অবশ্যই। উবাই: তাহলে আসুন, আমরা বাজি ধরি।
আবু বকর: আমি বাজি ধরতে রাজি আছি।
উবাই: কত বছর? আবু বকর ছয় বছর। [তিনি কোরানের আয়াতে ব্যবহৃত শব্দমালা ‘বিদই সিনিন’, যার অর্থ ‘কয়েক বছর’, থেকে অনুমান করে এই উত্তর দিয়েছিলেন।] কিন্তু ছয় বছরের মধ্যে রোমানরা বিজয়ী হতে পারেনি, তাই আবু বকরকে বাজির মূল্য পরিশোধ করতে হয়েছিল।
বদরের যুদ্ধে উবাই ইবনে খালাফ মারা যায় এবং ওই সময়েই রোমানরা বিজয়ী হয়। রোমানদের সঙ্গে পার্সিয়ানদের যুদ্ধের বিষয়টি আমরা বিভিন্ন অমুসলিম উৎস থেকেও জানতে পারি। ইসলামি উৎস থেকে পাওয়া এই ঘটনা পশ্চিমা বিশ্বের রেকর্ডের সঙ্গে পুরোপুরি মিলে যায়। ইতিহাস থেকে আমরা নিশ্চিতভাবেই জানি যে, বদরের যুদ্ধের দিনই রোমান সম্রাট হেরাক্লিয়াস পার্সিয়ান সম্রাট দ্বিতীয় খসরুর বিরুদ্ধে একটি ভয়াবহ আক্রমণ পরিচালনা করে। একই সাথে খসরুর দুজন সেনাপতি সম্রাটের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে এবং পরিবারের একজন সদস্যও তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে। ফলে পারস্য সেনাবাহিনীর মধ্যে বিশৃঙ্খলা ও ভাঙনের সৃষ্টি হয়, এবং খসরু খুব বাজেভাবে পরাজিত হয়। ঠিক সেই সময় হাজার মাইল দূরে বদরের সমভূমিতে আরেকটা যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল, যেখানে মুসলিমরা বিজয়ী হয়।
কিন্তু রোমানদের এই বিজয়ের খবর মুসলিমরা বদরের যুদ্ধের দিন জানতে পারেনি। দূরত্বের কারণে খবর পৌঁছতে দুই সপ্তাহের মতো সময় লেগেছিল। মুসলিমদের কাছে যখন এ খবর পৌঁছে তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে, একদিকে আবু বকর (রা) বাজিতে হেরে গেছেন, অন্যদিকে উবাই ইতিমধ্যে মারা গেছে। একটি দুর্বল হাদিসে অনুসারে, নবি করিম (সা) বাজির কথা শুনে আবু বকরকে (সা) জিজ্ঞেস করেছিলেন, “তুমি ৬ বছর কেন বলেছিলে? বিদই’ অর্থ তো ৯ বছর পর্যন্ত হতে পারে।” আরবিতে ‘কয়েকটি’ অর্থ ৩ থেকে ৯ পর্যন্ত যে কোনো সংখ্যা হতে পারে। এক্ষেত্রে আবু বকর (রা) হিসেব করে মাঝের সংখ্যাটি (৬) বেছে নিয়েছিলেন। প্রকৃতপক্ষে, বাজি ধরার ঠিক সাড়ে ৮ বছর পরে বদরের যুদ্ধ সংঘটিত হয় এবং রোমানরা পারসিকদের বিরুদ্ধে বিজয় লাভ করে।
আরও পড়ুনঃ