হাশিম: শীত ও গ্রীস্মের কাফেলা | বংশানুক্রম এবং হাতির বছর, আবদ মানাফের পুত্র ছিলেন হাশিম। সেখান থেকেই বনু হাশিম-এর সূত্রপাত। হাশিম ছিল তাঁর উপাধি। তাঁর আসল নাম ছিল ‘আমর’। ‘হাশিম এসেছে মূল ক্রিয়া ধাতু ‘হাশামা’ থেকে, যার অর্থ ‘চূর্ণ করা’: কারণ বার্লি পিষে তা হাজিদের মাঝে পরিবেশন করতেন। বলা হতো, হাশিম কখনও একা একা খাবার খেতেন না। যখনই তিনি খেতে বসতেন, তখনই কাউকে না কাউকে তাঁর সঙ্গে খাওয়ার জন্য ডেকে নিতেন। তাঁর উদারতার জন্য তাঁকে হাশিম বলা হতো।

হাশিম: শীত ও গ্রীস্মের কাফেলা | বংশানুক্রম এবং হাতির বছর | মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ জীবন
হাশিম কুরাইশদের আর্থিক অবস্থার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। তিনিই প্রথম ‘শীত ও গ্রীষ্মের কাফেলা’ চালু করেন। সেই সময়ে কোনো এক বছরে খুব মারাত্মক ধরা হয়েছিল। অবস্থা এতটাই খারাপ হয়েছিল যে অনেক মানুষ খাদ্যাভাবে মারা যাচ্ছিল। তখন হাশিম ভাবলেন, এভাবে চলতে পারে না, কিছু একটা করতে হবে। তখন তাঁর মনে এমন একটি ভাবনা এল যে বছরে একটির বদলে দুটি বাণিজ্য কাফেলা শুরু করলে কেমন হয়; একটি গ্রীষ্মকালে উত্তরে রোমে এবং অন্যটি শীতকালে দক্ষিণে ইয়েমেনে ।
তারা উত্তরে বসরা শহরে (দামেস্ক শহর থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত) যেত রোমান এবং পার্সিয়ান পণ্যের জন্য। আবার দক্ষিণে ইয়েমেনে যেত ভারতীয় ও আফ্রিকান পণ্যের জন্য। হাশিম ছিলেন খুবই বুদ্ধিমান ও প্রতিভাবান। তিনি বসরা থেকে ইয়েমেন পর্যন্ত একটি ‘লাইফলাইন’ তৈরি করেছিলেন; এর মাঝখানে ছিল মক্কা। ফলে অচিরেই হাশিম অনেক ধনী হয়ে ওঠেন।

কুরাইশদের শীত ও গ্রীষ্মের কাফেলার বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা একটি পুরো সুরা নাজিল করেছেন: “যাতে কুরাইশগণ নিরাপদে থাকতে পারে। নিরাপদে থাকতে পারে তারা শীত ও গ্রীষ্মকালীন সফরে; সুতরাং তারা ইবাদত করুক এই (কাবা) গৃহের প্রতিপালকের; যিনি তাদের ক্ষুধায় খাদ্য দান করেছেন এবং নিরাপত্তা দান করেছেন ভয়ভীতি থেকে।” [সুরা কুরাইশ, ১০৬:১-৪] হাশিম বুঝতে পেরেছিলেন, মক্কার কুরাইশ হওয়ার কারণে কেউই তাঁর লোকদের ক্ষতি করতে না।
তিনি এই ব্যাপারটি কাজে লাগিয়ে রোম ও ইয়েমেনের রাজাদের সঙ্গে চুক্তি করেছিলেন। চুক্তি অনুসারে কুরাইশরা যখন রোম ও ইয়েমেনে যাবে তখন সেখানে তারা নিরাপত্তা পাবে এবং ব্যবসার ক্ষেত্রেও বেশ কিছু সুবিধা পাবে। এখানে দেখা যাচ্ছে, মহানবি মুহাম্মদের (সা) তিন পূর্বপুরুষ, কুসাই রাজনৈতিক প্রজ্ঞার মাধ্যমে, হাশিম ধনসম্পদ আহরণের মাধ্যমে এবং আবদুল মুত্তালিব খ্যাতি ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কুরাইশদের জন্য নতুন করে ইতিহাস পড়েছিলেন। ব্যবসার মাধ্যমে হাশিম নিজেও বেশ সম্পদশালী হয়েছিলেন।
তাঁর সম্পদ অনেকের মনে ঈর্ষার জন্ম দিয়েছিল, বিশেষ করে তাঁর ভাই আবদ শামস ও ভাতিজা উমাইয়া ইবনে আবদ শামসের মধ্যে। বনু উমাইয়া এবং বনু হাশিমের মধ্যে এই বিদ্বেষ পরবর্তী সময়েও অব্যাহত ছিল। পরবর্তী কালে আব্বাসীয় ও উমাইয়া খেলাফতের মধ্যে যে বৈরিতার সৃষ্টি হয়েছিল, তার সূচনা হয়েছিল ওই সময়েই। হাশিম বেশ কয়েকটি বিয়ে করেছিলেন। সে যুগে একাধিক মহিলাকে বিয়ে করা ছিল একটি স্বাভাবিক ব্যাপার।
তাঁর এক স্ত্রী [নবিজির (সা) প্রপিতামহী| ছিলেন ইয়াসরিবের (মদিনা)। নিঃসন্দেহে এটি ছিল আল্লাহ তায়ালার পরিকল্পনার একটি অংশ। তা না হলে মক্কার একজন ব্যক্তি ইয়াসরিবের কাউকে বিয়ে করবে কেন? পরবর্তী সময়ে হাশিম গাজায় বাণিজ্যভ্রমণে গিয়ে মারা যান। এখনও পাজা এলাকায় ‘মসজিদুল সাইয়িদ হাশিম নামে একটি মসজিদ আছে। তিনি মারা যাওয়ার পর তাঁর স্ত্রী ইয়াসরিব শহরে গিয়ে বসবাস করতে থাকেন।
আরো পড়ুনঃ