শোকে বিলাপ করা যাবে না | বদরের যুদ্ধ-৭, ইবনে কাসিরের বর্ণনা অনুসারে, কুরাইশদের মধ্যে বদর থেকে মক্কায় ফিরে আসা প্রথম ব্যক্তি ছিল হায়সামান ইবনে আবদুল্লাহ আল-খুজাই। মক্কাবাসী তাকে আহত অবস্থায় দেখে জিজ্ঞেস করল, “ঘটনা কী?” উত্তরে সে উত্তর বলল, “উতবাকে হত্যা করা হয়েছে, শায়বাকে হত্যা করা হয়েছে, আবু আল-হাকামকে হত্যা করা হয়েছে, উমাইয়া ইবনে খালাফকে হত্যা করা হয়েছে, জুমা ইবনুল আসওয়াদকে হত্যা করা হয়েছে।”
এভাবে সে কুরাইশের পক্ষ থেকে যুদ্ধে নিহত নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের প্রত্যেকের নাম বলে গেল। মক্কার কুরাইশদের জন্য এ ছিল অবিশ্বাস্য সংবাদ। নামগুলো শুনতে শুনতে তারা ভাবল, ‘এই লোক নিশ্চয়ই উন্মাদ হয়ে গেছে, কারণ সে যাদের নাম বলছে তাদের সবাই যুদ্ধে মারা যাওয়া একদমই অসম্ভব।’

শোকে বিলাপ করা যাবে না | বদরের যুদ্ধ-৭ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
হায়সামান যখন মক্কায় ফিরে আসে, তখন উমাইয়া ইবনে খালাফের পুত্র সাফওয়ান ইবনে উমাইয়া কাবার কাছে বসে ছিল । খবরটা তার কাছে পৌঁছলে সে বলল, “এ অসম্ভব! এই লোকটি নিশ্চয়ই পাগল হয়ে গেছে! তাকে জিজ্ঞেস করো, সাফওয়ান ইবনে উমাইয়া কোথায়?” অর্থাৎ সে নিজের নাম উল্লেখ করে প্রমাণ করতে চাইছিল যে হায়সামান সত্যিই পাগল হয়ে গেছে। তখন কেউ একজন তাকে জিজ্ঞেস করল, “ও হায়সামান, সাফওয়ান ইবনে উমাইয়ার কী হয়েছে?” সে জবাব দিল, “সাফওয়ান তো ঠিক এখানেই বসে আছে। আর আমি নিজের চোখে দেখেছি কীভাবে তারা তার বাবা ও ভাইকে হত্যা করেছে।”
এবার সবাই বুঝতে পারল, হায়সামান পাগল হয়ে যায়নি; সে ঠিকই আছে এবং সত্য কথা বলছে। পরে ধীরে ধীরে কুরাইশ বাহিনীর অন্যরাও ফিরে এল। নেতৃস্থানীয় এতজন ব্যক্তিকে হারিয়ে খুব স্বাভাবিকভাবেই বদরের যুদ্ধের পরে মক্কায় বিরাট হতাশা ও শোকের ছায়া নেমে এসেছিল।

শোকে বিলাপ করা যাবে না
ইবনে ইসহাক উল্লেখ করেছেন, মক্কা তখন নারীদের কান্না ও বিলাপের নগরীতে পরিণত হয়েছিল। প্রতিটি পরিবারে চলছিল কান্না আর হাহাকার। এ যেন আতিকার দেখা সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন! সে স্বপ্ন দেখেছিল, প্রতিটি বাড়িতে পাথর এসে আঘাত করবে। আবু সুফিয়ান বাড়ি বাড়ি কান্নার বিষয়টি জানার পর এক সমাবেশ ডেকে ঘোষণা দিল, “এখন থেকে কেউ আর কান্নাকাটি বা বিলাপ করতে
পারবে না। আমরা চাই না মুসলিমরা আমাদের বিলাপ থেকে আনন্দ পাক।” ইবনে হিশাম উল্লেখ করেছেন: এক রাতে নবি করিমের (সা) দূর সম্পর্কের চাচা আল-আসওয়াদ ইবনে আল-মুত্তালিব (যে বদরের যুদ্ধে তার তিন পুত্রকে হারিয়েছে) এক নারীকে কাঁদতে শুনে খুশি হয়ে বলে, “মহিলাটিকে গিয়ে জিজ্ঞেস করো, বিলাপ না করার নিষেধাজ্ঞাটি কি প্রত্যাহার করা হয়েছে? তাহলে আমি আমার পুত্র জুমার (তার কনিষ্ঠতম পুত্র, যাকে সে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসত) জন্য শোক করে কাঁদতে পারি।”
কিন্তু আসলে ওই নারী কাঁদছিল তার হারিয়ে যাওয়া উটের জন্য। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য, কান্নার নিষেধাজ্ঞা ছিল শুধু বদরের যুদ্ধ বিষয়ে, এ ছাড়া অন্য যে কোনো কিছুর জন্য কান্নার অনুমতি ছিল। ইবনে কাসির মন্তব্য করেছেন, আল্লাহ তায়ালা এভাবেও তাদের শাস্তি দিয়েছিলেন। তারা মৃত আত্মীয়স্বজনদের জন্য কাঁদতে পারলে হয়তো কিছুটা মানসিক শান্তি পেত, তাদের মনোবেদনা সহনীয় হতে পারত। কিন্তু আবু সুফিয়ানের বিলাপের নিষেধজ্ঞার মধ্য দিয়ে আল্লাহ তাদের কষ্টের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়েছিলেন।
আরও পড়ুনঃ