সাওয়াত ব্যক্তিগত পর্যায়ে রাখার অনেক কারণ ছিল | ব্যক্তিগত পর্যায়ে ইসলামের দাওয়াত | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

সাওয়াত ব্যক্তিগত পর্যায়ে রাখার অনেক কারণ ছিল | ব্যক্তিগত পর্যায়ে ইসলামের দাওয়াত, প্রথম কারণ হলো, ব্যক্তিগত দাওয়াতের ফলে মুসলিম ও কুরাইশদের মধ্যে শুরুতেই সম্ভাব্য সংঘাত এড়ানো সম্ভব হয়েছে। কেননা এতে কারো কোনো সমস্যা হচ্ছিল না। যাঁরা ইসলামে ধর্মান্তরিত হচ্ছিলেন তাঁরা বিষয়টি প্রকাশ্যে ঘোষণা করছিলেন না: নিজেদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখেছিলেন, ধর্মের বিষয়টি সামাজিকভাবে সবার সামনে আনেননি। সে কারণে প্রথম তিন বছর অত্যাচার, নিপীড়ন ইত্যাদি ছিল না। নব মুসলিমরা তাঁদের ধর্মের বুনিয়াদি বিষয়ে শেখার ক্ষেত্রে মনোনিবেশ করেছিলেন, অন্য কোনো বিষয়ে চিন্তা করার অবকাশ পাননি। বাস্তবিক অর্থেই এই সময় তাঁরা নিজেদের আধ্যাত্মিকভাবে প্রস্তুত করেছিলেন, যা পরে কঠিন সময় মোকাবিলায় সহায়ক হয়েছিল।

 

 

সাওয়াত ব্যক্তিগত পর্যায়ে রাখার অনেক কারণ ছিল | ব্যক্তিগত পর্যায়ে ইসলামের দাওয়াত | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

সাওয়াত ব্যক্তিগত পর্যায়ে রাখার অনেক কারণ ছিল | ব্যক্তিগত পর্যায়ে ইসলামের দাওয়াত | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

এ থেকে আমরা ধারণা করতে পারি, কিছু পরিস্থিতিতে গোপনে ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার অনুমতি রয়েছে ধর্মীয়ভাবে রয়েছে। যদি সমাজের বা রাষ্ট্রের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভীতিকর ও নিপীড়নমূলক হয় তাহলে প্রকাশ্যে দাওয়াত দেওয়ার প্রয়োজন নেই। উদাহরণস্বরূপ, গত শতাব্দীর বিশ ও তিরিশের দশকে যখন বিভিন্ন দেশে সমাজতান্ত্রিক সরকারগুলো ক্ষমতা দখল করেছিল, তখন তারা অনেক মুসলিমকে শুধু ধর্মবিশ্বাসের কারণে অত্যাচার করেছে, এমনকি হত্যা পর্যন্ত করেছে। যদি অত্যাচারিত হওয়ার ভয় থাকে, তবে ইসলামের দৃষ্টিতে ধর্মবিশ্বাস জনসমক্ষে প্রকাশ করার বাধ্যবাধকতা নেই। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে সংযত ও গুটিয়ে রাখুন। অবশ্য কেউ যদি আপনার ধর্ম সম্পর্কে জানতে চায়, তবে তাকে দাওয়াত দিন।

আরেকটা বিষয় লক্ষ করুন: প্রাথমিক পর্যায়ে যারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন তাঁরাই নেতৃত্বের অবস্থানে গিয়েছিলেন, তাঁরাই এই নতুন ধর্মের প্রসারে চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছেন। পরবর্তীকালে অনেকেই ইসলাম গ্রহণ করেছেন, কিন্তু তাঁদের বেশিরভাগের নামও আমরা জানি না। হিসাব অনুসারে এক লাখের বেশি সাহাবি ছিলেন, তাঁদের মধ্যে মাত্র পাঁচ হাজারের মতো সাহাবির নামের হদিস আছে।

তাঁদের মধ্যে যেসব সাহাবি বিভিন্ন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং নবিজির (সা) সঙ্গে হজ করেছিলেন, শুধু তাঁদের নামই লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। তাও অধিকাংশ ক্ষেত্রে একটি বা দুটি ঘটনা লিপিবদ্ধ রয়েছে। শুধু হাতে গোনা কয়েকজন সাহাবির জীবনের কাহিনি আমরা বিস্তারিতভাবে জানি, তাঁদের অধিকাংশই প্রথম দিকের ইসলাম গ্রহণকারী শুরুর সময়ের আনসার। অনস্বীকার্য যে, প্রাথমিক পর্যায়ের মুসলিমরা ইসলামের প্রসারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

 

islamiagoln.com google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

তাঁদের অনেকেই নিম্নবর্ণের মানুষ ছিলেন। যেমন, আম্মার ইবনে ইয়াসির, বেলাল প্রমুখ। যেকোনো ধর্মের ক্ষেত্রেই এরকম ঘটে থাকে। মক্কা বিজয়ের পর রোমের সম্রাট হেরাক্লিয়াসকে আল্লাহর রসুল (সা) একটি চিঠি লিখে ইসলাম ধর্মে আহ্বান করেছিলেন। চিঠিটি হাতে পেয়ে হেরাক্লিয়াস বাহক ও দূত আৰু সুফিয়ানকে দশটি প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছিলেন। একটি প্রশ্ন ছিল, “তাঁর প্রথম ধর্মান্ত রিত কারা? ধনীরা নাকি দুর্বলেরা?” আবু সুফিয়ান উত্তর দিয়েছিলেন, “দুর্বল ও গরিবেরা।” একথা শুনে হেরাক্লিয়াস বলেছিলেন, “এটা সত্য ধর্মের একটা লক্ষণ। ধনী বা অভিজাতদের কাছে ধর্মের আবেদন সহজে পৌঁছায় না, কিন্তু দরিদ্ররা তা তাড়াতাড়িই বুঝতে পারে এবং গ্রহণ করে।

আপনি যদি একজন ধনী এবং ক্ষমতাবান ব্যক্তি হন, তবে বিদ্যমান পরিবর্তন হলে আপনার হারানোর অনেক কিছু থাকবে। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরানে মুহের (আ) জাতি সম্পর্কে বলেছেন: “তাঁর সম্প্রদায়ের নেতৃস্থানীয় লোকেরা যারা কুফরি করেছিল (তারা) বলল, “আমরা তোমাকে তো আমাদের মতো একজন মানুষ ছাড়া আর কিছুই দেখছি না।

আমাদের মধ্যে যারা অতি দীনহীন তারা ছাড়া আর কাউকে তো তোমাকে অনুসরণ করতে দেখি না।” [সুরা হুদ, ১১:27) আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আরও উল্লেখ করেছেন, মুসার (আ) অনুসারীরা (অর্থাৎ ইহুদিরা) প্রথমদিকে নিম্নবিত্ত শ্রেণি থেকে এলেও শেষ পর্যন্ত বিজয়ী জাতিতে পরিণত হয়েছিল: “আর যে সম্প্রদায়কে দুর্বল মনে করা হতো তাদের আমি আমার আশীর্বাদপুষ্ঠ রাজ্যের পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তের উত্তরাধিকারী করি।” [সুরা আরাফ[,৭ঃ১৩৭] আমরা দেখেছি, কালের পরিক্রমায় বনি ইসরাইল নেতৃত্বের আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছিল।

 

সাওয়াত ব্যক্তিগত পর্যায়ে রাখার অনেক কারণ ছিল | ব্যক্তিগত পর্যায়ে ইসলামের দাওয়াত | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যক্তিগতভাবে দাওয়াত দিয়ে ওই সময়টা কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো বিবেচনা করা হয়েছিল তা হলো:

  • ১) শুরুতেই যাতে বৈরিতার মুখে পড়তে না হয়; 
  • ২) এই সময়টি ইমানের ভিত্তি নির্মাণের কাজে ব্যয় করা যায়;
  • ৩) নতুন মুসলিমদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ গঠনের কাজে লাগানো এবং
  • ৪) প্রাথমিক পর্যায়ের ইসলাম গ্রহণকারীকে ‘রোল মডেল’ হিসেবে তৈরি করা।

যদিও কোনো প্রামাণিক বর্ণনা নেই, তবু মনে করা হয় যে, এই প্রথম পর্যায়েই নামাজ ও ওজুর বিধান চালু হয়েছিল। জানা যায়, জিব্রাইল (আ) নিজে এসে আল্লাহর রসুলকে (সা) ওজু করা নামাজ আদায় করার পদ্ধতি শিখিয়েছিলেন। উল্লেখ্য, এই পর্যায়ে নামাজ ছিল ঐচ্ছিক, বাধ্যতামূলক নয়। ইসরা ও মিরাজের পর দৈনিক পাঁচবার নামাজ সব মুসলিমের জন্য ‘ফরজ’ বা বাধ্যতামূলক করা হয়। এই পর্যায়ে সব নামাজ দুই রাকাত ছিল। সহিহ বুখারির একটি হাদিসে আয়েশা এ কথা বলেছেন।

আরো পড়ুনঃ

Leave a Comment