সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা): আমার মা-বাবাকে যেন তোমার জন্য মুক্তিপণ হিসেবে দেওয়া হয় | ওহুদের যুদ্ধ-৪ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা): আমার মা-বাবাকে যেন তোমার জন্য মুক্তিপণ হিসেবে দেওয়া হয় | ওহুদের যুদ্ধ-৪, সাদও কুরাইশদের দিকে তির নিক্ষেপ করে যাচ্ছিলেন। জানা যায়, তিনি যখন কুরাইশদের দিকে একের পর এক তির নিক্ষেপ করছিলেন, তখন নবি করিম (সা) নিজে মাটি থেকে তির খুঁজে খুঁজে সাদকে এগিয়ে দিচ্ছিলেন। সেই সময় তিনি সাদকে প্রশংসা করে এমন একটি কথা বলেন যা তিনি অন্য কোনো সাহাবিকে কখনও বলেননি। কথাটি ছিল: “ফিদাকা আবি ওয়া উম্মি (আমার মা-বাবাকে যেন তোমার জন্য মুক্তিপণ হিসেবে দেওয়া হয়)। তির ছোড়ো। ও সাদ, তির ছোড়ো।” এখানে মা-বাবাকে মুক্তিপণ হিসেবে দেওয়া বলতে যা বোঝায় তা হলো, ‘তোমার জন্য আমি আমার মা-বাবাকে কোরবানি করতেও রাজি আছি।’

সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা): আমার মা-বাবাকে যেন তোমার জন্য মুক্তিপণ হিসেবে দেওয়া হয় | ওহুদের যুদ্ধ-৪ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা): আমার মা-বাবাকে যেন তোমার জন্য মুক্তিপণ হিসেবে দেওয়া হয় | ওহুদের যুদ্ধ-৪ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

সাহাবিরা নবিজির (সা) প্রতি সম্মান ও ভালোবাসা প্রকাশের অংশ হিসেবে তাঁকে উদ্দেশ্য করে এই কথাটি নবিজিকে (সা) প্রায়শই বলতেন। অবশ্যই নিজের মা-বাবাকে অন্য কারো জন্য কোরবানি করা অসম্ভব কাজ। কিন্তু এ কথা যাকে বলা হয় তার প্রতি বক্তার সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা ও আবেগের প্রকাশ ঘটে। সত্যিকার অর্থে নবিজি (সা) ছাড়া আর কে-ই বা এই সম্মানের যোগ্য হতে পারে, আর কার জন্যই বা এই ত্যাগ করা সম্ভব। এখানে নবিজি (সা) স্বয়ং সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাসকে (রা) সম্মানসূচক এই কথাটি বললেন ।

তালহা ইবনে উবায়দিল্লাহ (রা): “তুমি যদি শুধু বিসমিল্লাহ বলতে”

যুদ্ধের এ পর্যায়ে নবি করিমের (সা) সঙ্গে থাকা সাতজন আনসারের সবাই শহিদ হন। সশস্ত্র যোদ্ধা হিসেবে রয়ে যান শুধু তালহা। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সাদের সঙ্গে শুধু তিরধনুক ছিল; এ থেকে আমরা ধারণা করতে পারি, যুদ্ধের প্রথম পর্বে তিনি ছিলেন তিরন্দাজ দলের একজন ।

এক সময় নবিজির (সা) খোঁজ করতে করতে এক কুরাইশ পাহাড়ে উঠে আসে। নবিজি (সা) তাকে মোকাবিলা করার জন্য তালহাকে পাঠান। লড়াইয়ের একপর্যায়ে তালহার কয়েকটি আঙুল কাটা পড়লে যন্ত্রণায় তাঁর মুখ থেকে ‘উহ্’ ধ্বনি উচ্চারিত হয়। নবিজি (সা) তাঁকে বলেন, “তুমি যদি শুধু “বিসমিল্লাহ” বলতে, তাহলে ফেরেশতাগণ তোমাকে সবার সামনে দিয়ে আকাশে তুলে নিয়ে যেত।” যা-ই হোক, তালহা শেষ পর্যন্ত কুরাইশ লোকটিকে পরাজিত করে হত্যা করেন।

 

islamiagoln.com google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

কাতাদা ইবনুল নুমান আল-আওসি (রা): “আমার দুই চোখ আরও নিখুঁত হয়ে উঠেছে

 সেই সময় কিছু সাহাবি নবিজির (সা) খোঁজ করতে শুরু করেছেন। তাদের মধ্যে ছিলেন কাতাদা ইবনুল নুমান আল-আউসি (রা) নামের একজন আনসার। তিনি  পরে বলেন: “ওহুদের যুদ্ধের দিন নবিজি (সা) আমাকে একটি ধনুক দিয়েছিলেন। আমি সেটি এত বেশি ব্যবহার করেছিলাম যে তা আর ব্যবহার করার উপযোগী ছিল না।”

  • এখানে দুটি বিষয় লক্ষণীয়।

১) কাতাদাকে ধনুক দেওয়ার ঘটনাটি ঘটেছিল পাহাড়ের ওই খোঁড়লের ভেতরে ।

২) নবিজি (সা) কিছু অস্ত্র সংগ্রহ করেছিলেন, তা থেকে তিনি কাতাদাকে একটি ধনুক দিয়েছিলেন। এর অর্থ হলো, তিনি পাহাড়ের উপরে উঠে তির-ধনুক সংগ্রহ করেন। সেই সংগ্রহ থেকে তিনি সাদকেও কিছু তির দিয়েছিলেন। কাতাদা বর্ণনা করেছেন, “একের পর একে তির আসতে থাকলে আমি নবিজিকে (সা) রক্ষা করার জন্য নিজের শরীরকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিলাম।”

অনেক কুরাইশ একই সঙ্গে অবিরাম তির ছুড়ছে, কখন কোন দিক থেকে তির ছুটে আসবে তা বোঝার কোনো উপায় ছিল না। অত্যন্ত বিপজ্জনক পরিস্থিতি। কাতাদা আরও বর্ণনা করেছেন, “আমি তিরগুলোর দিকে যতটা সম্ভব নজর রাখছিলাম । আমি চেষ্টা করছিলাম, কোনো তির যেন নবি করিমকে (সা) আঘাত করতে না পারে। এক সময় দেখলাম এমন একটি তির আসছে যা আমার মুখ দিয়ে ছাড়া আর কোনোভাবে আটকানো সম্ভব ছিল না।

 

সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা): আমার মা-বাবাকে যেন তোমার জন্য মুক্তিপণ হিসেবে দেওয়া হয় | ওহুদের যুদ্ধ-৪ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

আমি তা-ই করলাম । ফলে তিরটি আমার চোখে এসে বিধল। নবিজি (সা) তা দেখে কাঁদতে লাগলেন এবং বললেন, ‘হে আল্লাহ, কাতাদা তোমার রসুলকে (সা) তার নিজের চোখ ব্যবহার করে রক্ষা করেছে! তার চোখ যেন সবচেয়ে সেরা চোখে পরিণত হয়, তার দৃষ্টিশক্তি যেন সবচেয়ে প্রখর হয়!” নবিজি (সা) এই দোয়া করে কাতাদার চোখ থেকে তিরটি বের করে আনার সঙ্গে সঙ্গে কাতাদার চোখ ভালো হয়ে যায়। কাতাদার কথায়, “এরপর আমার দুই চোখের মধ্যে ওই (তির বেঁধা) চোখের দৃষ্টিশক্তি আগের চেয়ে আরও প্রখর হয়েছিল।”

আরও পড়ুনঃ

Leave a Comment