যুদ্ধবন্দি: সুহায়েল ইবনে আমর | বদরের যুদ্ধ-৬, বদরের যুদ্ধের বিজয়ের খবর ছড়িয়ে পড়লে মদিনার মুসলিমরা একত্রিত হয়ে নবি করিমের (সা) আগমনের জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। সেদিনই নবিজি (সা) ৭০ জন যুদ্ধবন্দিকে নিয়ে মদিনায় ফিরে এলেন। তিনি তাদের মসজিদুন নববিতে রাখার ব্যবস্থা করলেন। যুদ্ধের ময়দানে যে সাহাবি যাকে বন্দি করেছিলেন, তাঁকেই সেই বন্দির দেখভাল করার দায়িত্ব দিলেন। কুরাইশ নেতাদের মধ্যে অগ্রগণ্য সুহায়েল ইবনে আমরকে দেখভাল করার দায়িত্ব পড়েছিল স্বয়ং নবিজির (সা) ওপর। মানব জাতির ইতিহাসে কখনও এ ঘটনা ঘটেনি যে এক সেনাবাহিনীর নেতা অন্য এক সেনাবাহিনীর নেতার দেখভাল করছেন।

যুদ্ধবন্দি: সুহায়েল ইবনে আমর | বদরের যুদ্ধ-৬ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
যুদ্ধবন্দিদের নিয়ে নবিজি (সা) যখন মদিনায় ফিরে আসেন, তখন নবি-পত্নী সাওদা বাড়িতে ছিলেন না। কুরাইশদের আত্মসমর্পণ ও নবিজির (সা) ফিরে আসার খবর শুনে তিনি তাড়াতাড়ি বাড়িতে ছুটে যান। গিয়ে দেখতে পান, সুহায়েল ইবনে আমর হাত বাঁধা অবস্থায় ঘরের এক কোণে বসে আছে। একজন কুরাইশ নেতাকে এ অবস্থায় দেখে তাঁর যে প্রতিক্রিয়া হয়েছিল তা তিনি পরে নিজেই বর্ণনা করেছেন: “আমি ভুলেই গিয়েছিলাম আমি কে আর সেখানকার অবস্থাই বা কী! আমি শুধু বললাম, “ও ইয়াজিদের পিতা, তুমি এভাবে আত্মসমর্পণ করলে? যুদ্ধবন্দি হয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে কেন তুমি যুদ্ধের ময়দানে সম্মানজনকভাবে মৃত্যুবরণ করলে না?”

সাওদার মনে তাৎক্ষণিকভাবে সেই জাহেলি দিনের ভাবনা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল। কুরাইশদের এত বড় একজন নেতার এভাবে বন্দি অবস্থায় বসে থাকা তাঁর কাছে অপমানজনক মনে হয়েছিল। পরে এই ঘটনা বর্ণনা করে তিনি বলেন, “আমি তখন কী বলেছিলাম তা ঠিকমত বুঝে উঠতে পারিনি, যতক্ষণ না আমার পাশ থেকে নবিজিকে (সা) বলতে শুনলাম, ও সাওদা, তুমি কি তাকে আল্লাহ ও তাঁর রসুলের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য উৎসাহ দিচ্ছে?” অর্থাৎ তুমি কি বুঝতে পারছ তুমি কী বলছ? একথা শুনে সাওদা এক প্রকার অজুহাত দিয়ে বললেন, “ও আল্লাহর রসুল, আল্লাহর কসম, আমি তাকে এ অবস্থায় বসে থাকতে দেখে কী বলেছি তা বুঝতে পারিনি। আমি নিজেকে সংবরণ করতে পারিনি।” যা-ই হোক, নবিজি (সা) সাওদার অজুহাতটি মেনে নেন। সাওদাও পরে তাঁর এ কৃতকর্মের জন্য অনেক অনুশোচনা করেন।
এই ঘটনা থেকে আমরা সাহাবিদের মধ্যে সাধারণ মানবিক বৈশিষ্ট্যগুলো থাকার প্রমাণ পাই। আবেগের বশবর্তী হয়ে সাওদা যা করেছিলেন তা ছিল একটি মারাত্মক ভুল। তবু নবিজি (সা) তাঁকে গালমন্দ করেননি। নবিজি (সা) যদি এমন একটি ভুলকে, যা আপাতভাবে কৃষ্ণরের পর্যায়ে পড়ে, ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখতে পারেন, তাহলে আমরা কেন তা পারব না? এ রকম আরও অনেক উদাহরণ রয়েছে।
এক হাদিসে আছে, একবার এক লোক মরুভূমিতে তার উট হারিয়ে হতবিহ্বল হয়ে পড়ে। এক সময় সেটি খুঁজে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে বলে ওঠে, “হে আল্লাহ, আপনি আমার বান্দা, আর আমি আপনার রব।” নবিজি (সা) ওই লোকটির পাগলামির কথা শুনে হেসে ফেলেছিলেন। তিনি তার পক্ষে এই অজুহাতও দাঁড় করিয়েছিলেন যে “মাত্রাতিরিক্ত খুশি হওয়ার কারণে সে ভুলটি করেছিল।” সুতরাং মূল কথা হলো, যখন কেউ আবেগ, ক্রোধ ইত্যাদির কারণে ভুল করে বসে এবং ভুলটি স্বীকার করে নেয়, তাহলে বিষয়টিকে আর গুরুত্ব দেওয়া উচিত নয় ।
আরও পড়ুনঃ