মুসলিমদের ওপর হঠাৎ হামলার চেষ্টা | হুদায়বিয়ার সন্ধি-২, কুরাইশরা একদিন হুদায়বিয়ায় শিবিরে অবস্থানরত মুসলিমদের ওপর হঠাৎ হামলা চালানোর চেষ্টা করে। ঘটনাটি ঠিক কোন দিন ঘটেছিল তা আমাদের জানা নেই, কোনো সিরাহের বইয়েও তার উল্লেখ নেই। কিন্তু আমরা এটি আলাদাভাবে উল্লেখ করছি এই কারণে যে, এই একটি ঘটনা ছাড়া হুদায়বিয়ায় বাকি সব কিছুই ছিল কুরাইশ ও নবি করিমের (সা) মধ্যে বারবার দূত চালাচালি ।
মুসলিমদের ওপর হঠাৎ হামলার চেষ্টা | হুদায়বিয়ার সন্ধি-২ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

কুরাইশদের এই আক্রমণের ঘটনা সহিহ মুসলিমে বর্ণিত আছে। কুরাইশদের ৮০ জনের একটি দল তানিমের পাহাড়ি এলাকা থেকে হঠাৎ আক্রমণ চালায় । এ জন্য তারা ফজরের সময়কে বেছে নেয়, যাতে মুসলিমদের অপ্রস্তুত অবস্থায় পাওয়া যায় । কিন্তু নামাজের সময় হলেও পাহারারত মুসলিম স্কাউটরা কুরাইশরা যে আসছে তা আগেভাগেই দেখতে পান। এমন কিছু ঘটার আশঙ্কায় তাঁরা ভালোভাবেই প্রস্তুত ছিলেন। ফলে কুরাইশদের পরিকল্পনা পুরোপুরি ভেস্তে যায়। উল্টো মুসলিমরা তাদের ঘিরে ফেলে এবং কোনো রক্তপাত ছাড়াই তাদের আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করে। সাহাবিরা তাদের বন্দি করে নবিজির (সা) কাছে নিয়ে আসেন । নবিজি (সা) তাদের সবাইকে ক্ষমা করে মক্কায় ফেরত পাঠান।
এই ঘটনা থেকেও স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, নবিজি (সা) কোনো প্রকার সংঘর্ষ কিংবা রক্তপাত চাননি। আক্রমণ করতে আসা এই লোকদের হত্যা করার সম্পূর্ণ অধিকার তাঁর ছিল। যদি ৮০ জনকেই নির্মূল করা হতো, তাহলে প্রচলিত আইনি বিধানেও (এমনকি আজকের যুগের মানদণ্ডেও) তা পুরোপুরি ন্যায়সংগত হিসেবে বিবেচিত হতো। তবু তাদের কোনো ক্ষতি না করে মক্কায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

আল্লাহ কোরানের সুরা ফাতহে এই ঘটনার উল্লেখ করেছেন: “আমি মক্কার উপত্যকায় (হুদায়বিয়ার নিকটবর্তী) ওদের ওপর তোমাদের জয়ী করার পর ওদের হাতকে তোমাদের বিরুদ্ধে ও তোমাদের হাতকে ওদের বিরুদ্ধে নিরস্ত করেছি। তোমরা যা কিছু কর আল্লাহ তা দেখেন।” [সুরা ফাতহ, ৪৮:২৪] কল্পনা করুন, ৮০ জন লোক সম্পূর্ণ সশস্ত্র অবস্থায় কিছু ঘুমন্ত মানুষকে আক্রমণ করেছে। সেখানে শত শত সাহাবি মারা যেতে পারতেন; কিন্তু আল্লাহ তাদের রক্ষা করেছেন। আবার নবিজি (সা) যদি তাদের একজনকেও হত্যা করতেন, তাহলে হুদায়বিয়ার চুক্তি কখনই বাস্তবের মুখ দেখত না ।
প্রাসঙ্গিকভাবে উল্লেখ্য, সুরা ফাতহ পুরোটাই হুদায়বিয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে নাজিল হয়েছে, মক্কা বিজয়কে কেন্দ্র করে নয়। এটি ঠিক যে, সাধারণভাবে ‘আল-ফাতহ’ বলতে আমরা মক্কা বিজয়ই বুঝে থাকি। কিন্তু সুরা ফাতহের সঙ্গে মক্কা বিজয়ের কোনো সম্পর্ক নেই। পুরো সুরাটিই হুদায়বিয়ার ঘটনার পর নাজিল হয়েছিল। সুতরাং, ‘আমরা আপনাকে একটি স্পষ্ট বিজয় দিয়েছি’ [৪৮:১] বলতে নিশ্চিতভাবেই হুদায়বিয়া ঘটনাটিই বোঝানো হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ