হানজালা ইবনে আবি আমিরের (রা) শাহাদাতবরণ | ওহুদের যুদ্ধ-৩, মক্কার কুরাইশরা বদরের যুদ্ধের পরপরই ওহুদের যুদ্ধের পরিকল্পনা করা শুরু করে। ওহুদের যুদ্ধ ছিল পরিপূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে যুদ্ধ, ঠিক বদরের মতো নয়। এই যুদ্ধের পরিকল্পনার পেছনে কুরাইশদের দিক থেকে কয়েকটি কারণ আমরা ধারণা করতে পারি:
হানজালা ইবনে আবি আমিরের (রা) শাহাদাতবরণ | ওহুদের যুদ্ধ-৩ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

১. ধর্মীয় কারণ: কুরাইশদের দিক থেকে নবি করিম (সা) ও ইসলামের প্রতি যে বিদ্বেষ ও বৈরিতা সৃষ্টি হয়েছিল তা আরও বেড়ে গিয়েছিল।
২. সামাজিক কারণ: বদরের যুদ্ধে কুরাইশরা তাদের প্রথম সারির প্রায় সব নেতাসহ অনেক আত্মীয়স্বজনকে হারিয়েছে। যেমন, ইকরিমার পিতা আবু জেহেল, সাফওয়ানের পিতা উমাইয়া প্রমুখ। সে জন্য তাদের মনে প্রতিশোধস্পৃহা জাগ্রত হয়। সর্বোপরি বদরের পুরো ব্যাপারটিই ছিল তাদের জন্য অত্যন্ত বিব্রতকর।
৩. অর্থনৈতিক কারণ: ভৌগোলিকভাবে দেখতে গেলে, মক্কা থেকে সিরিয়ায় বাণিজ্যিক কাফেলা যাওয়ার পথের মধ্যখানে ছিল মদিনার অবস্থান, যা মুসলিমদের দখলে চলে গিয়েছিল। মুসলিমরা সিরিয়া যাওয়ার সব পথ আটকে রেখে কুরাইশদের ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ায়। অর্থাৎ মক্কাবাসী কুরাইশরা সিরিয়ার সঙ্গে ঠিকমতো আর বাণিজ্য করতে পারছিল না। তারা বিকল্প পথ সন্ধানের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। ফলে তাদের অর্থনীতি আক্ষরিক অর্থে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছিল।
মক্কার অর্থনীতি ছিল সিরিয়া ও ইয়েমেনের মধ্যে বাণিজ্যিক সংযোগপথ বা পাইপলাইনের (বা করিডরের) ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। এই ব্যবসা পরিচালনার দায়িত্বে ছিল কুরাইশরা, তারা এ থেকে প্রচুর অর্থ উপার্জন করত। এই পাইপলাইনের একপাশের অংশ (অর্থাৎ সিরিয়ার দিক) কাটা পড়লে অন্য পাশের অংশও (ইয়েমেনের দিক) কাজ করবে না। তাই কুরাইশরা তাদের অর্থনীতি বাঁচানোর জন্য ভীষণ মরিয়া হয়ে উঠেছিল।
৪. রাজনৈতিক কারণ: ইসলামি প্রজাতন্ত্রের আকার ক্রমশ বাড়ছিল । একের পর এক উপজাতি ইসলামের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করছিল। ফলে কুরাইশদের কাছে নবিজি (সা) রাজনৈতিক হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন।

হানজালা ইবনে আবি আমিরের (রা) শাহাদাতবরণ
ওহুদের যুদ্ধের প্রথম অংশে মুসলিমরা জয়ী হয়েছিল। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরানের সুরা আল ইমরানে (৩:১৫২) এ সম্পর্কে বলেন, যখন মুসলিমরা তাঁর প্রতি আন্তরিক ও মনের দিক থেকে খাঁটি ছিল, তিনি তখন প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তাঁদের দিয়েছেন। কিন্তু যখন তাঁরা সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে এবং লোভী হয়ে উঠেছে, তখন তাঁদের ওপর বিপর্যয় নেমে এসেছে। হানজালা ইবনে আবি-আমিরের (রা) মৃত্যুটা ছিল একটু অন্যরকম। ঠিক যে সময় তিনি আবু সুফিয়ানকে হত্যা করার উদ্যোগ নিয়েছেন, তখনই হঠাৎ কোথা থেকে একটি বর্ণা এসে তাকে আঘাত করে।
যুদ্ধের পরে নবিজি (সা) বলেন, “আমি দেখেছি, ফেরেশতারা হানজালার লাশকে উপরে উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে গোসল করাচ্ছে।” এটি সেই বিখ্যাত ঘটনা যা আমরা অনেকেই জানি: হানজালা ছিলেন নববিবাহিত। যুদ্ধের আগের রাতে তিনি তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে শারীরিকভাবে মিলিত হয়েছিলেন, কিন্তু ফরজ গোসল করার সময়। পাননি। পরের দিন সকালেই তিনি শাহাদাত বরণ করলে ফেরেশতারা তাকে গোসল করানোর দায়িত্ব নিয়েছিলেন।
আরও পড়ুনঃ