জায়েদ ইবনে সাবিতের হিব্রু ভাষা শেখা | আল-মুরাইসি ও বনু আল-মুস্তালিকের অভিযান | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

জায়েদ ইবনে সাবিতের হিব্রু ভাষা শেখা | আল-মুরাইসি ও বনু আল-মুস্তালিকের অভিযান, এই সময়ে, অথবা এর কিছুটা আগেও হতে পারে, নবিজি (সা) জায়েদ ইবনে সাবিতকে হিব্রু ভাষা {১} শেখার নির্দেশ দেন। তিনি চেয়েছিলেন নিজেদের মধ্যে বিশ্বাসযোগ্য কেউ এই ভাষাটি শিখুক। জায়েদ নিজেই বলেন, তিনি মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে হিব্রু ভাষা পড়তে ও লিখতে শিখে ফেলেন। এই কাজের জন্য জায়েদকে বাছাই করার পেছনে কিছু কারণ ছিল:

জায়েদ ইবনে সাবিতের হিব্রু ভাষা শেখা | আল-মুরাইসি ও বনু আল-মুস্তালিকের অভিযান | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

জায়েদ ইবনে সাবিতের হিব্রু ভাষা শেখা | আল-মুরাইসি ও বনু আল-মুস্তালিকের অভিযান | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

ক) জায়েদ সেই সময় ছিলেন তরুণ, তাই তাঁর মস্তিষ্ক ছিল প্রখর । নবিজি (সা) যখন মদিনায় আসেন, তখন জায়েদের বয়স ছিল আনুমানিক ১১ বছর। তিনি ইতিমধ্যে কোরানের অনেক সুরা মুখস্থ করে ফেলেছিলেন। জায়েদ ইবনে সাবিত ছিলেন পবিত্র কোরানের হাফেজদের (মুখস্থকারীদের) অন্যতম। পরবর্তীকালে আবু বকর (রা) ও উমর (রা) তাঁকে পবিত্র কোরান সংকলনের কাজের জন্য বেছে নিয়েছিলেন। বর্তমানে আমরা পবিত্র কোরান যে অবস্থায় (সুরা নাম্বার ইত্যাদি) আমরা পাই, তার মূলে ছিলেন জায়েদ ।

খ) জায়েদের শৈশব কেটেছে ইহুদি প্রতিবেশীদের সঙ্গে; তাদের সঙ্গেই তিনি বেড়ে উঠেছিলেন; ইহুদিদের বিদ্যালয়ে পড়াশোনাও করেছিলেন। ফলে নবিজির (সা) আদেশে তিনি যখন হিব্রু ভাষা শেখেন, তখন তাঁর হিব্রু ভাষা কিছুটা জানা ছিল।

মদ (‘অ্যালকোহল’) নিষিদ্ধকরণ

মদ (অ্যালকোহল) নিষিদ্ধ করার বিধান ধাপে ধাপে এসেছিল।

প্রথম ধাপ:

“লোকে তোমাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বলো, ‘উভয়ের মধ্যেই আছে মহাপাপ, এবং মানুষের জন্য উপকারও আছে; কিন্তু উপকারের চেয়ে পাপই বেশি।” [সুরা বাকারা, ২:২১৯] এই ধাপটি ছিল মদিনার প্রথম যুগে (প্রথম কিংবা দ্বিতীয় হিজরিতে) বদরের যুদ্ধের আগে কিংবা পরে। এই ধাপে মদ এড়ানোর চেষ্টা করার বিষয়ে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে; তবে কোনো সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা আসেনি।

দ্বিতীয় ধাপ:

ওহুদের যুদ্ধের ঠিক পরপরই (তৃতীয় হিজরি) একটি ঘটনা ঘটেছিল। এক সাহাবি মাতাল অবস্থায় নামাজের ইমামতি করতে গিয়ে কিছু হাস্যকর রকমের ভুল করেছিলেন। তাই আল্লাহ নিচের আয়াতটি নাজিল করেন: “হে মুমিনগণ! তোমরা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় নামাজে যেও না, যতক্ষণ না তোমরা কী বলছ তা বুঝতে পার…।” [সুরা নিসা, ৪:৪৩] এভাবে এই আয়াতের মাধ্যমে মদ্যপান দিনের বেলার জন্য নিষিদ্ধ হলো। তবে তা এশার নামাজের পর থেকে ফজরের নামাজের আগে পর্যন্ত তখনও অনুমোদিত ছিল ।

 

islamiagoln.com google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

তৃতীয় ধাপ:

অবশেষে বনু নাদিরকে অবরোধের সময় (চতুর্থ হিজরি) আল্লাহ তায়ালা নিচের আয়াতটি নাজিল করেন। “হে মুমিনগণ! মদ, জুয়া, মূর্তি ও ভাগ্যপরীক্ষার তির ঘৃণ্য বস্ত্র, শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা তা বর্জন করো যাতে তোমরা সফল হতে পার।” [সুরা মায়েদা, ৫:১০] এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ অ্যালকোহল সম্পূর্ণভাবে হারাম বা নিষিদ্ধ করলেন। ‘ধর্মের ব্যাপারে কোনো জবরদস্তি নেই’ —এই আয়াত নাজিলের কারণ (পটভূমি) এবার আমরা বনু নাদির সম্পর্কিত শেষ কাহিনিটি আলোচনা করব যা বেশ চমকপ্রদ।

এই কাহিনি সিরাহের বইগুলোতে ভাসা ভাসাভাবে উল্লিখিত আছে, তবে হাদিসের কয়েকটি বইয়ে এটি পাওয়া যায়। সুনান আবু দাউদে ইবনে আব্বাসের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, জাহেলি যুগে যেসব নারীর ঘন ঘন গর্ভপাত হতো তারা বলত, “হে আল্লাহ, আপনি যদি আমাকে একটি পুত্র দান করেন তাহলে আমি তাকে ইহুদি বানাব (অর্থাৎ ইহুদিদের কাছে দিয়ে দেব)।” কারণ সভ্যতা, শিক্ষা, সম্পদ, ধর্ম ইত্যাদি প্রতিটি ক্ষেত্রেই ইহুদি উপজাতিগুলো ইয়াসরিবের আরব উপজাতিগুলোর তুলনায় এগিয়ে ছিল ।

 

জায়েদ ইবনে সাবিতের হিব্রু ভাষা শেখা | আল-মুরাইসি ও বনু আল-মুস্তালিকের অভিযান | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

এভাবে মদিনায় আরবদের ঘরে এমন কিছু শিশু জন্ম নিয়েছিল যাদের ইহুদি গোত্র বনু নাদিরের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। তারা বড় হওয়ার পর ইহুদি হিসেবেই পরিচিত হতো। যেসব আনসার জাহেলি যুগে তাদের ছেলেদের ইহুদিদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন, বনু নাদিরকে বহিষ্কারের সময় তাঁরা চাননি তাঁদের ছেলেরা মদিনা থেকে বহিষ্কৃত হোক। তাঁরা চাইলেন, তাঁদের ছেলেরা  ইহুদি ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করুক। কারণ, কেউ ইসলাম গ্রহণ করলে তাকে বহিষ্কৃত হতে হবে না।

সেই ছেলেদের কেউ কেউ ইসলাম গ্রহণ করে সম্পত্তিসহ মদিনায় থেকে যায় । আবার কেউ কেউ তা করেনি। তারা আরব হিসেবে জন্ম নিলেও ইহুদি হয়ে গেছে। পিতামাতারা প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানদের ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করতে চেয়েছিলেন। এ প্রসঙ্গেই আল্লাহ তায়ালা কোরানে প্রসিদ্ধ এই আয়াতটি নাজিল করেন: “ধর্ম নিয়ে কোনো জবরদস্তি নেই। সত্যপথ এখন ভ্রান্তপথ থেকে সুস্পষ্ট হয়েছে।” [সুরা বাকারা, ২:২৫৬] এখানে আল্লাহ বলছেন, তাদের কাছে সত্য ও মিথ্যা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান: তাই এটি এখন তাদের সিদ্ধান্তের বিষয়। তা ছাড়া তারা এখন প্রাপ্তবয়স্ক ও স্বাধীন, নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেরাই নিতে সক্ষম ।

আরও পড়ুনঃ

Leave a Comment