হিলফ আল-ফুল বা হিলফুল ফুল | মহানবি মুহাম্মদের (সা) কৈশোর ও যৌবনের কাল | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

হিলফ আল-ফুল বা হিলফুল ফুল | মহানবি মুহাম্মদের (সা) কৈশোর ও যৌবনের কাল, ফিজারের যুদ্ধের আরও কয়েক বছর পর এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটে। ঘটনাটি ‘হিলফুল ফুদুল’ অর্থাৎ ফুদুলের সন্ধি/চুক্তি নামে পরিচিত। একে হিলফুল মুতাইয়াবিনও (অর্থাৎ মুতাইয়াবিনের সন্ধি/চুক্তি) বলা হয়। সেই সময় মহানবির (সা) বয়স ২০-এর কোঠায়। এই চুক্তিটি হয়েছিল মক্কায়, পবিত্র জিলকদ মাসে। হিলফুল ফুদুল প্রতিষ্ঠার একটি পটভূমি ছিল যা এখানে উল্লেখ করা প্রাসঙ্গিক।

ইয়েমেনের জুবায়েদ নামের এক ব্যক্তি একবার হজের পূর্বে নায় এসে আল-আস বিন ওয়াইলের কাছে (আমর ইবনুল আসের পিতা) কিছু মালপত্র বিক্রি করেছিল। জুবায়েদ গোত্রকে মক্কায় অভিজাত হিসাবে গণ্য করা হতো না। আল-আস ইবনে ওয়াইল ছিল একজন ধনী ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ ও কুরাইশদের অন্যতম নেতা। আল-আস ইবনে ওয়াইল তাকে বলেছিল, “হজের পরে আপনার ইয়েমেনে ফিরে যাওয়ার আগে আমি আপনাকে টাকা দেব।” জুবায়েদ হজ সম্পাদন করে আল-আসের কাছে গিয়ে তার কাছে টাকা চাইল। আল-আস তাকে তার পরের দিন আসতে বলল। সে পরের দিন এসে হাজির হলে আল-আস আরও এক দিন পরে আসতে বলল ।

 

হিলফ আল-ফুল বা হিলফুল ফুল | মহানবি মুহাম্মদের (সা) কৈশোর ও যৌবনের কাল | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

হিলফ আল-ফুল বা হিলফুল ফুল | মহানবি মুহাম্মদের (সা) কৈশোর ও যৌবনের কাল | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

আল-আস জুবায়েদকে এভাবে বারবার ঘুরাতে থাকে যাতে জুবায়েদ বুঝতে পারে যে সে তার টাকাটা আর ফেরত পাবে না। একপর্যায়ে জুবায়েদ কুরাইশদের অন্য গোত্রগুলোর (যেমন বনু হাশিম, বনু আবদ আল-দার, বনু আবদ আল- মানাফ প্রমুখ) কাছে গিয়ে সাহায্য চাইলে সবাই বিভিন্ন অজুহাতে তাকে এড়িয়ে যায়। এর কারণ হলো, আল-আস ছিল কুরাইশদের মধ্যে একজন ধনী ও প্রভাবশালী ব্যক্তি। অন্যদিকে জুবায়েদের গোত্র অনেক দূরে (ইয়েমেনে) থাকে বলে তার পক্ষে বিষয়টি নিয়ে লড়াই করার লোক ছিল না। উপায়ান্তর না দেখে জুবায়েদ ঘটনাটি জনসমক্ষে প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নেয়।

সেই সময়ে আরবরা কোনো বিষয় জনসমক্ষে প্রকাশ করতে চাইলে তা কবিতার আকারে লিখে ঘোষণা করত। একদিন যখন কাবাঘরের চারপাশে অনেক মানুষ সমবেত ছিল, তখন জুবায়েদ কবিতার ভাষায় উচ্চস্বরে তার পাওনার বিষয়টি সবাইকে জানিয়ে দেয় “হে ফিহরের পরিবার (কুরাইশ)! আমার ব্যবসার ক্ষেত্রে আমার প্রতি অন্যায় আচরণ করা হয়েছে! যারা আমাকে রক্ষা করবে আমি এখন তাদের থেকে (অর্থাৎ আমার বাড়ি থেকে) অনেক দূরের মক্কায়! আমি এখনও আমার ইহরাম বেঁধেই আছি! আমার চুল আঁচড়াইনি এবং আমার ওমরাও শেষ করিনি। (তোমাদের মধ্যে) কে আমাকে সাহায্য করবে? হিজর (মাকাম ইব্রাহিম) এবং হাজরের (কালো পাথর) মাঝে তোমরা আমার সঙ্গে এরূপ আচরণ করছ! হারাম তো তাদেরই জন্য যারা উন্নত চরিত্রের অধিকারী। বিশ্বাসঘাতক কখনও পবিত্রতা অর্জন করতে পারে না!”

 

islamiagoln.com google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

কাবার সামনে এই ঘোষণার পর খবরটি দাবানলের মতো সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। নবিজির (সা) চাচা জুবায়ের ইবনে আবদুল মুত্তালিব খবরটি শুনে ভাবলেন, এ বিষয়ে কিছু একটা করতে হবে। তিনি কুরাইশদের সব প্রবীণ সদস্যকে আবদুল্লাহ ইবনে জুদআনের বাড়িতে একত্রিত করেন। আবদুল্লাহ ইবনে জুদআন ছিলেন আয়েশার (রা) দূর সম্পর্কের এক চাচা। আন্তরিক অতিথিপরায়ণতার কারণে তিনি মক্কার জনগণের কাছে সর্বাধিক গণ্যমান্য ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তাঁর বাড়িতে সেই সভায় তারা একটি চুক্তিতে উপনীত হয় যে তারা দলমত ও গোত্র নির্বিশেষে নিপীড়কের বিরুদ্ধে নিপীড়িতদের পক্ষে থাকবে; এমনকি নিপীড়িত যদি অনেক দূরের গোত্রের এবং নিপীড়ক যদি কুরাইশদের মধ্যে থেকেও কেউ হয়।

 

হিলফ আল-ফুল বা হিলফুল ফুল | মহানবি মুহাম্মদের (সা) কৈশোর ও যৌবনের কাল | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

সবাই কাবার সামনে গিয়ে একটি দলিলে নাম স্বাক্ষর করে। সেখানে অনেকেই ছিল নিরক্ষর, তারা পড়তে বা লিখতে পারত না। তাই তারা প্রত্যেকের হাত আতর/সুগন্ধিতে ডুবিয়ে হাতগুলো কাবার গায়ে ছাপ দেওয়ার মতো করে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় রাখে। এ কারণেই একে ‘হিলফুল মুতায়াবিন’ (নিজেদেরকে সুগন্ধযুক্তকারীদের) চুক্তি/সন্ধি বলা হয়।

এর অনেক বছর পরে নবিজি (সা) বলেছিলেন, যা সহিহ বুখারিতে বর্ণিত আছে, ইবনে জুদআনের বাড়িতে যে চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। সেটিকে যদি এখন (ইসলামের যুগে) আমাকে সমর্থন করতে বলা হয়, তবে আমি তা করব। আমাকে যদি প্রচুর সংখ্যক লাল উটও দেওয়া হয় তবু আমি আমার অবস্থান থেকে সরে আসব না।” এর অর্থ হচ্ছে, নবিজি (সা) ওই চুক্তির অংশ হতে পেরে অত্যন্ত গর্ব বোধ করেছিলেন এবং যা থেকে তিনি কোনোক্রমেই সরে আসতে ইচ্ছুক ছিলেন না। তিনি বলেছেন, “ওই চুক্তিতে সবাই একমত হয়েছিল। যে, সবাইকে যার যার প্রাপ্য অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া হবে, এবং নিপীড়নকারীকে কোনো রকম ছাড় দেওয়া হবে না।”

আরো পড়ূনঃ

 

Leave a Comment