হাসান (রা) ও হোসেন রা সম্পর্কিত হাদিস | আল-মুরাইসি ও বনু আল-মুস্তালিকের অভিযান, হাসান ও হোসেন ইসলামে অত্যন্ত উচ্চ মর্যাদার অধিকারী ছিলেন। নবিজি (সা) তাঁদের অপরিসীম ভালবাসতেন। হাসান ও হোসেনকে নিয়ে অনেক হাদিস আছে; সেগুলোর মধ্যে থেকে আমরা কয়েকটি নিয়ে আলোচনা করব:
হাসান (রা) ও হোসেন রা সম্পর্কিত হাদিস | আল-মুরাইসি ও বনু আল-মুস্তালিকের অভিযান | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

১) নবিজি (সা) যখন নামাজের জন্য সেজদায় যেতেন, তখন হাসান হামাগুড়ি দিয়ে তাঁর পিঠের ওপর চড়ে বসতেন। সেই অবস্থায় নবিজি (সা) সেজদা থেকে উঠতেন না, হাসানকে তাঁর পিঠের ওপর খেলা চালিয়ে যেতে দিতেন।
২) একবার নবি করিম (সা) মসজিদে খুতবা দেওয়ার সময় হাসান ও হোসেন সেখানে এসে হাজির হন। তাঁরা দুজনেই লাল রঙের পোশাক পরে ছিলেন। লম্বা পোশাক পরে হাঁটতে গিয়ে হোচট খেয়ে দুজনেই মসজিদের মেঝেতে পড়ে যান; একজন অন্যজনের গায়ের উপর পড়েন। নবিজি (সা) তা দেখতে পেয়ে খুতবা থামিয়ে ছুটে এসে দুজনকে কোলে তুলে নিয়ে বলেন, “আল্লাহ যা বলেছেন তা সত্য, ‘তোমার সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তো তোমাদের জন্য পরীক্ষা।” [৬৪:১৫ )
অর্থাৎ “আমি আমার এই দুই নাতিকে হোঁচট খেতে দেখে ধৈর্য ধরতে পারিনি, তাই খুতবা থামিয়ে এসে তাদের তুলে নিলাম।” আসলে তিনি এখানে একটি অজুহাত দিচ্ছেন।

৩) সহিহ বুখারির একটি বিখ্যাত হাদিসে আছে, নবিজি (সা) একদিন খুতবা দেওয়ার পুরো সময়টা জুড়েই হাসানকে কোলে নিয়ে ছিলেন। খুতবার সময় তিনি বললেন, “আমার এই পুত্র একজন সাইয়িদ (সম্মানীয় ব্যক্তি, নেতা)। একদিন আসবে যেদিন সে মুসলিমদের দুটি বড় দলের মধ্যে সমন্বয় ঘটাবে।” আমরা ইতিহাস থেকে জানি, ঠিক তাই ঘটেছিল। এখানে লক্ষ করুন, নবিজি (সা) কিন্তু উভয় দলকেই ‘মুসলিম’ বলে অভিহিত করেছেন। সুতরাং আমাদের মধ্যে যারা বলে, তাদের মধ্যে একদল ছিল মুসলিম, আর অন্যদল ছিল ফাসেক /কাফের, তাদের কথার সঙ্গে নবিজির (সা) কথার মিল নেই।
খারিজিরা চতুর্থ খলিফা আলিকে (রা) হত্যা করার পর মদিনাবাসী পরবর্তী খলিফা হিসেবে হাসানের (রা) আনুগত্য গ্রহণ করে। অন্যদিকে সিরিয়ার লোকেরা খলিফা হিসেবে মুয়াবিয়ার (রা) আনুগত্য গ্রহণ করে। ফলে এর পরের ছয় মাস ধরে মুসলিম বিশ্বের রাষ্ট্রতন্ত্রে এক ধরনের অচলাবস্থা চলে। এমনকি দুই দলের মধ্যে যুদ্ধ হতে পারে এমন কথাও শোনা যেতে থাকে।
মুয়াবিয়া (রা) একটি বড় যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার সম্ভাবনার কথা শোনার পর বললেন, “আমরা যদি নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ করি, তাহলে আমরা তাদের হত্যা করব, তারাও আমাদের হত্যা করবে। তা হলে কোন মুসলিম বেঁচে থাকবে? বরং তাঁকে (হাসানকে) খবর পাঠাও, এবং দেখো সে কোনো সমঝোতায় রাজি আছে কি না।” পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, মুয়াবিয়া তাঁর অবস্থান থেকে সরে আসতে (অর্থাৎ খলিফার পদ ত্যাগ করতে) রাজি নন, তবু আমরা তাঁকে ‘রাদি আল্লাহু আনহু’ (আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট থাকুন) বলব।
হাসানের (রা) কাছে মুয়াবিয়ার (রা) বার্তাটি পৌঁছল। তিনি দেখলেন, তিন বছর ধরে বড় ধরনের যুদ্ধ চলছে, যুদ্ধে অনেক মানুষ মারা গেছে, এখন মানুষ আবার যুদ্ধ করতে চাইছে। হাসান (রা) তখন মদিনায় মুসলিমদের উদ্দেশ্যে খুব আবেগময় ও শক্তিশালী একটি ভাষণ দেন, যা ইতিহাসের অংশ হয়ে আছে। তিনি বলেন, “তোমরা কি সত্যিই আল্লাহর ওয়াস্তে মৃত্যুকে বরণ করে নিতে চাও? বরং চলো, আমরা উম্মতের বৃহত্তর স্বার্থে কিছু শর্তসাপেক্ষে খেলাফত ছেড়ে দেই।”
তাঁর অনুসারীরা এতে একমত হলেন। ফলে খেলাফত গ্রহণের ছয় মাস পরে তিনি ক্ষমতা ছেড়ে দিলেন (অর্থাৎ পদত্যাগ করলেন)। এভাবেই মুয়াবিয়ার মুসলিম রাষ্ট্রের একক খলিফা হওয়া আর বিতর্কের বিষয় থাকল না। সময়টা ছিল ৪১ হিজরি সালের রবিউল আউয়াল মাস।
আমরা সুন্নিরা বিশ্বাস করি, সঠিকভাবে চালিত (‘রাশেদিন’ বা সঠিক নির্দেশনাপ্রাপ্ত’) খলিফা ছিলেন পাঁচজন। হাসান (রা) তাদের মধ্যে পঞ্চম, যদিও তিনি মাত্র ছয় মাসের জন্য খেলাফতের দায়িত্বে ছিলেন। মুসনাদ ইমাম আহমদে আছে, নবিজি (সা) বলেছেন, “নবির পদ্ধতি অনুসারে পরিচালিত খেলাফত তোমাদের মধ্যে ৩০ বছরের জন্য থাকবে। তারপর আল্লাহ যতদিন চান ততদিন পর্যন্ত ন্যায়নিষ্ঠ রাজত্ব চলবে। তারপর আসবে অত্যাচারী শাসন, আল্লাহ যতদিন ইচ্ছা করেন ততদিন পর্যন্ত তা চলবে। সবশেষে আবার নবির পদ্ধতি অনুসারে পরিচালিত খেলাফত ফিরে আসবে।”
লক্ষ করুন, নবিজি (সা) বলেছিলেন, খেলাফত চলবে ৩০ বছরের জন্য’। হাসানের খেলাফতকাল যোগ করলে সময়টা একদম মাস পর্যন্ত মিলে যায়। নবিজি (সা) রবিউল আওয়াল মাসে ইন্তেকাল করেন, তার ঠিক ৩০ বছর পরের রবিউল আওয়াল মাসে হাসান (রা) তাঁর খেলাফত ত্যাগ করেন। সুবহানাল্লাহ!
৪) নবি করিম (সা) বলেছেন, “হাসান ও হোসেন জান্নাতের যুবকদের নেতা, আর তাঁদের পিতা তাঁদের চেয়েও উত্তম।”
আরও পড়ুনঃ