ইসরা ও মিরাজের বিবরণ সংক্রান্ত ইস্যু | রাতের ভ্রমণ এবং ঊর্ধ্বলোকে আরোহণ-১ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

ইসরা ও মিরাজের বিবরণ সংক্রান্ত ইস্যু | রাতের ভ্রমণ এবং ঊর্ধ্বলোকে আরোহণ-১,  ইসরা ও মিরাজের ঘটনা একাডেমিক দৃষ্টিকোণ থেকে কিছুটা সমস্যাপূর্ণ। এর বেশ কয়েকটি কারণ আছে। এই ঘটনা নিয়ে ২০ জনেরও বেশি সাহাবির বর্ণনায় অসংখ্য হাদিস আছে। শুধু সহিহ বুখারিতেই ছয়জন সাহাবির বর্ণনা রয়েছে। আমরা যদি মক্কার সময়ের সব হাদিস ইসরা ও মিরাজ ছাড়া সংকলন করি এবং শুধুমাত্র ইসরা ও মিরাজের হাদিসগুলো আলাদাভাবে সংকলন করি, তাহলে পরের অংশটিই বড় হবে।

 

ইসরা ও মিরাজের বিবরণ সংক্রান্ত ইস্যু | রাতের ভ্রমণ এবং ঊর্ধ্বলোকে আরোহণ-১ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

ইসরা ও মিরাজের বিবরণ সংক্রান্ত ইস্যু | রাতের ভ্রমণ এবং ঊর্ধ্বলোকে আরোহণ-১ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

এ বিষয়ে অনেক হাদিস থাকার কারণে কিছু কিছু সমস্যারও সৃষ্টি হয়েছে:

১) বর্ণনাকারীদের দ্বারা কাহিনির অতিরঞ্জন:

ইসরা ও মিরাজের ঘটনা সম্পর্কে প্রথম দিকের কাহিনিকাররা যেসব বর্ণনা লিপিবদ্ধ করেছেন সেগুলোর একটি বড় অংশ ছিল অতিরঞ্জিত। অনেক অখ্যাত বইতে বিবৃত এসব কাহিনির অনেক কিছুই আসলে মনগড়া । ইসলামের প্রথম যুগে নবিজিকে (সা) নিয়ে অনেক কাহিনি একাডেমিকভাবে যাচাই-বাছাইয়ের আগেই অনেক লোক মসজিদে মসজিদে জনসাধারণের মাঝে বিভিন্ন মুখরোচক গল্প আকারে প্রচার করতেন। অনেক কাহিনি ছিল নির্জলা মিথ্যা ও বানোয়াট।

কিছু ব্যক্তি কেবল অর্থ উপার্জনের জন্য এসব করতেন। সেইসব কাহিনির কিছু কিছু এতটাই জনপ্রিয় হয়েছিল যে সেগুলো পরবর্তীকালে ইসলামি সাহিত্যের অংশ হয়ে ওঠে। বেশি জনপ্রিয়তা পায় ইসরা ও মিরাজ সম্পর্কিত কাহিনিগুলো। একটা সময়ে ইসলামি পণ্ডিত ও গবেষকরা এসব কাহিনির প্রচারে ব্রাশ টেনে ধরেন। কোনো বিষয় বা ঘটনা বাস্তব সত্য কি না তা বৈজ্ঞানিকভাবে যাচাই করা এখন অনেক সহজ হয়ে গেছে। বর্ণনাকারীদের ধারাবাহিকতা দেখলেই বিষয়ের সঠিকতা সম্পর্কে বুঝতে পারা যায় ।

 

islamiagoln.com google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

২) ক্রোনোলজি বা কালানুক্রম:

ইসরা ও মিরাজ সম্পর্কে আমাদের কাছে অনেক টুকরো টুকরো গল্প বা কাহিনি আছে। কিন্তু এগুলো সঠিক কালানুক্রমে সাজানোই মূল সমস্যা। কাহিনির ছোট ছোট অংশ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে, কিন্তু সেগুলো যাচাই-বাছাই করে সময়ের ছকে ফেলা সত্যিই খুব কঠিন। সাহাবিদের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছিল। প্রায় ২০ সাহাবি ইসরা ও মিরাজ সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন। ঘটনাগুলোর সময়রেখার নিয়ে কখনও কখনও তাঁদের মধ্যে মতভিন্নতাও ছিল।

উদাহরণস্বরূপ, জিব্রাইল (আ) নবিজিকে (সা) দুটি পাত্র একটিতে দুধ, অন্যটিতে মদ সহ তুলে দিয়ে সেখান থেকে একটি বেছে নিতে বলেছিলেন। একটি ভাষ্য অনুসারে, এই ঘটনা ঘটেছিল বায়তুল মাকদিসে অবস্থানের সময়। আবার অন্য এক ভাষ্য অনুসারে, এটা ঘটেছিল ঊর্ধ্বলোকে ভ্রমণের সময়। দুই ভাষ্যই সঠিক। এখন সমস্যা হলো, আমরা এ দুইয়ের মধ্যে কীভাবে সমন্বয় করব? স্পষ্টতই দুটি বর্ণনার একটি সঠিক। কোনটা সঠিক তা আমরা কীভাবে বুঝতে পারব? কিছু স্কলার বলেছেন, ঘটনাটি দুবার ঘটেছে। অন্যরা বলেছেন, আমরা যেটার পরম্পরা শক্তিশালী সেটা গ্রহণ করব। সুতরাং স্কলারদের জন্য এর সুরাহা করা একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

 

ইসরা ও মিরাজের বিবরণ সংক্রান্ত ইস্যু | রাতের ভ্রমণ এবং ঊর্ধ্বলোকে আরোহণ-১ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

ইসরা ও মিরাজ সম্পর্কে বিবরণের এত বেশি ভিন্নতা থেকে কোনো কোনো স্কলার (যেমন: ইমাম আল-নওয়াবি ও ইবনে আবি জামরা) এই ধারণায় পৌঁছেছিলেন যে, একাধিকবার (সম্ভবত দুবার) ইসরা ও মিরাজের ঘটনা ঘটেছিল। ভিন্ন ভিন্ন বর্ণনার সমন্বয় করতে না পারার কারণেই তাঁরা এরকম মত দিয়েছিলেন বলে মনে করা হয়। যা-ই হোক, আমি (ইয়াসির কাদি) সহ সংখ্যাগরিষ্ঠের মত হলো, ইসরা ও মিরাজের ঘটনা একবারই ঘটেছিল। আল্লাহ তায়ালা সুরা ইসরায় স্পষ্টভাবেই একবচনে ‘একটি রাতের কথা উল্লেখ করেছেন। সুতরাং এটি স্পষ্ট যে, ইসরা ও মিরাজ কেবল একবারই ঘটেছে। এখানে কালানুক্রমের ক্ষেত্রে যদি কোনো ত্রুটি থাকে, তবে সে ত্রুটি দূর করার চেষ্টা করতে হবে।

আরও পড়ুনঃ

Leave a Comment