খাজরাজরা কেন ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন? | ইয়াসরিবের জন্য বীজ রোপণ, (১) আল্লাহ তায়ালা কাকে পছন্দ করবেন, তা একান্তই তাঁর এখতিয়ার। প্রথম ইসলামি প্রজাতন্ত্র সৃষ্টির জন্য তিনি বেছে নিয়েছিলেন ইয়াসরিব বা মদিনা খাজরাজ উপজাতির লোকদের।
( ২) খাজরাজ ও আউস উপজাতির লোকেরা ইহুদিদের সঙ্গে মেলামেশার মাধ্যমে একেশ্বরবাদী ধর্ম সম্পর্কে অনেকটাই অবগত ছিলেন; আরবে আর কোনো উপজাতি এ বিষয়ে তাঁদের মতো অবগত ছিলেন না। তাঁরা সৃষ্টিকর্তা, তওহিদ, নবি-রসুল, ধর্মগ্রন্থ, ধর্মীয় আচারাদি, আইন, নীতি ইত্যাদির ধারণা বুঝতে পারতেন।
কিন্তু অন্য আরবদের অধিকাংশই ছিল এ বিষয়ে অজ্ঞ। আল্লাহ তায়ালা কোরানে বলেছেন: -… এ সত্য (কিতাব) তোমার প্রতিপালকের কাছ থেকে এসেছে, যাতে তুমি এমন এক সম্প্রদায়কে সতর্ক করতে পার যাদের কাছে তোমার পূর্বে কোনো সতর্ককারী (নবি) আসেনি।” [সুরা সিজদা, ৩২:৩] কিন্তু খাজরাজরা (এবং আউসরা) ভালোভাবে জানতেন, নবি কী, ধর্মগ্রন্থের ভূমিকা কী। তাঁরা ইহুদিদের তুলনায় নিজেদের হীনতর মনে করতেন, কারণ ইহুদিদের সভ্যতা ছিল তাঁদের তুলনায় অনেক সমৃদ্ধ। ইহুদিরা পড়তে ও লিখতে পারত, তাঁদের বিদ্যালয় ও উপাসনালয় ছিল। কিন্তু খাজরাজ ও আউস উপজাতির এসব কিছুই ছিল না। এ কারণেই তাঁরা হীনম্মন্যতায় ভুগতেন। ইহুদিরাও তাঁদের অবজ্ঞা করে বলত, “আমাদের ধর্মগ্রন্থ আছে। আমাদের নবি আছে। আমরা তোমাদের চেয়ে উত্তম।” তারা তাদের ধর্মগ্রন্থ নিয়ে আরবদের কাছে এভাবেই গর্ব করত।

খাজরাজরা কেন ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন? | ইয়াসরিবের জন্য বীজ রোপণ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
আল্লাহ তায়ালা কোরানে এই বিষয়টি পরোক্ষভাবে উল্লেখ করেছেন:
“যখনই তাদের কাছে আল্লাহর কাছ থেকে কোনো কিতাব নাজিল হলো, যা তাদের কাছে ইতিমধ্যে প্রেরিত কিতাবের সত্যতা স্বীকার করে, (অথচ) এর আগে তারা নিজেরাই অন্যান্য কাফেরের ওপর বিজয়ী হওয়ার জন্য প্রার্থনা করত। (কিন্তু আজ) যখন তা তাদের কাছে এল এবং যাকে তারা যথাযথ চিনতেও পারল, তারা তাঁকে অবিশ্বাস করল।”
(সুরা বাকারা, ২:৮৯) এভাবে ইহুদিরা ইয়াসরিবে একদিকে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে অহংকার করত, অন্যদিকে আউস ও খাজরাজকে ধর্মান্তরিত হয়ে তাদের ধর্ম গ্রহণ করার সুযোগও দিত না। ইহুদিদের এই দাম্ভিকতা ও অহংকার খাজরাজ ও আউসকে সেই সময় বেশ পীড়া দিচ্ছিল। তাই ইসলামের মাধ্যমে খাজরাজদের সামনে যখন সভ্যতা, আইন, নীতি, নৈতিকতা ইত্যাদি গ্রহণ করার সুযোগ উপস্থিত হলো, তখন তা বেশ সহজেই তা গ্রহণ করলেন।

আউস ও খাজরাজের মধ্যে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইহুদিরা বলত, “তোমাদের বিরুদ্ধে জয়ী হওয়া এবং তোমাদের শেষ ব্যক্তিকে হত্যা করা আমাদের জন্য শুধু সময়ের ব্যাপার। কারণ আমরা এমন একজন নবির জন্য অপেক্ষা করছি যিনি শীঘ্রই আসছেন। আর তিনি আসা মাত্রই সব ফয়সালা হয়ে যাবে।” ইহুদিরা বলত, সেই মৰি এলেই তারা আরব পৌত্তলিকদের বিরুদ্ধে জয়ী হবে। কিন্তু আল্লাহ বলেছেন, যখন সত্যি সত্যি আরবদের মধ্যে নবি এল, তখন “তারা তাঁকে অবিশ্বাস করল’ [২:৮৯]।
ইহুদিদের এই ঔদ্ধত্য ও অহংকার শেষ পর্যন্ত তাদের বিপক্ষে কাজ করে। হঠাৎ করেই যেন পুরো অবস্থা পাল্টে গেল। খাজরাজের ওই ছয়জন লোক এমন একটি ধর্ম গ্রহণ করার সুযোগ পেলেন যার সাথে ছিল একটি ধর্মগ্রন্থ ও একজন নবি। তা ছাড়া তাঁরা (খাজরাজরা) ভেতরে ভেতরে জানতেন যে এই ধর্ম ও নবি সত্য হতে পারে। তাই তাঁরা অনেকটা দ্বিধান্বিত চিত্তেই ইসলাম গ্রহণ করলেন ।
ওই ছয়জন খাজরাজের মধ্যে কয়েকজন বিখ্যাত আনসার ছিলেন। যথা: উকবা ইবনে আমির, জাবির ইবনে আবদিল্লাহ এবং আসাদ ইবনে জুরারা। তাঁরা ইসলাম গ্রহণ করার পর ইয়াসরিবে ফিরে গিয়ে সেখানে ইসলামের বার্তা ছড়িয়ে দিলেন। কয়েক মাসের মধ্যেই শহরের প্রত্যেক মানুষের কাছে এই নতুন বার্তা পৌঁছে গেল। তাঁরা আরও জেনে গেলেন যে, তাঁদের নিজেদের কিছু লোক ইতিমধ্যেই ওই নতুন ধর্ম গ্রহণ করেছে।
আরও পড়ুনঃ