মুসলিম বাহিনীকে সারিবদ্ধ করা | বদরের যুদ্ধ-৩, সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ফজরের নামাজ আদায় করার পরে নবি করিম (সা) মুসলিম বাহিনীকে সারিবদ্ধ করতে শুরু করলেন। তিনি এমন একটি কৌশল অবলম্বন করলেন যা আরবরা আগে কখনও দেখেনি। আদি যুগের আরবরা ‘হিট অ্যান্ড রানা কৌশল ব্যবহার করত। তারা আক্রমণ করেই সেখান থেকে সরে পড়ত এবং পরে ফিরে এসে দখল নেওয়ার চেষ্টা করত; তারা বারবার এটা করত।

মুসলিম বাহিনীকে সারিবদ্ধ করা | বদরের যুদ্ধ-৩ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
কিন্তু নবিজির (সা) কৌশলটি ছিল সারিবদ্ধভাবে সামরিক ব্যাটালিয়নের ‘মার্চ’ করে এগিয়ে যাওয়া; এটি আমাদের আধুনিক যুগে খুবই প্রচলিত একটি পদ্ধতি। আল্লাহ পবিত্র কোরানে এ সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন [৬১:৪] {১} । এই কৌশলটি আরবদের জানা ছিল না। কিন্তু আল্লাহ তাঁর রসুলকে (সা) এই কৌশলটি শিখিয়ে দিয়েছিলেন। সেই দিন বদরে মুসলিমদের কাছে তেমন একটা অস্ত্রশস্ত্র ছিল না। অল্পবিস্তর যা কিছু অস্ত্র ছিল তা দিয়েই মুসলিমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিলেন। নবিজি (সা) কোনো সামরিক বিদ্যালয়ে প্রশিক্ষণ না নিলেও সেনাবাহিনীকে সাজানোর ব্যাপারে তাঁর গভীর অন্তর্দৃষ্টি ছিল । এই নতুন কৌশলই যুদ্ধে মুসলিমদের সাফল্য এনেছিল।
নবি করিম (সা) নিজে হেঁটে হেঁটে সারিগুলো সোজা করছিলেন, যেমন করে নামাজের ‘কাতার’ সোজা থাকে। সোজা করতে গিয়ে তিনি সাহাবিদের একটি ছোট লাঠি দিয়ে মৃদু টোকা দিচ্ছিলেন। সেখানে সুয়াদ নামের এক সাহাবি ছিলেন, যিনি তাঁর সারি বা লাইন থেকে একটু সামনে এগিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তা দেখে নবিজি (সা) তাঁর পেটে খোঁচা মেরে বললেন, “হে সুয়াদ, লাইন সোজা করো।”

সুয়াদ। হে আল্লাহর রসুল, আপনি আমাকে কোনো কারণ ছাড়াই (অর্থাৎ অন্যায়ভাবে) খোঁচা মেরে ব্যথা দিয়েছেন। আল্লাহ তো আপনাকে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। সুতরাং আমি ন্যায়বিচার চাই। নবিজি (সা) (সঙ্গে সঙ্গে লাঠি ফেলে দিয়ে নিজের জামাটি কিছুটা ভুলে ধরে): এখানে আমাকে পাল্টা খোঁচা দাও ।
সুয়াদ তৎক্ষণাৎ নবিজিকে (সা) জড়িয়ে ধরে তাঁর ত্বকের যে অংশটি উন্মোচিত ছিল সেখানে চুম্বন করলেন।
নবিজি (সা): সুয়াদ, এ তুমি কী করছ?
সুয়াদ: হে আল্লাহর রসুল, আমরা যে পরিস্থিতিতে আছি, তাতে তো আমার মৃত্যুও হতে পারে; আমার ইচ্ছা ছিল মৃত্যুর আগে আমার ত্বক আপনার ত্বক স্পর্শ করুক। সুয়াদ যুদ্ধে মারা যাননি। তিনি শুধু চাতুর্যের সাথে নবিজিকে (সা) চুম্বন ও
আলিঙ্গন করার পরিকল্পনা করেছিলেন।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার দৃষ্টিতে সত্য-মিথ্যা ও ন্যায়-অন্যায়ের মাপকাঠিতে সবাই সমান। ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাই আল্লাহ তায়ালার শরিয়তের অধীন। এখানেই ইসলাম ধর্মের মাহাত্ম্য। এক ইহুদি কোনো এক ব্যাপারে তদানীন্তন খলিফা আলিকে (রা) আদালতে নিয়ে যায়। সেখানে বিচারক খলিফার বিরুদ্ধে রায় দিলে তিনি তা মেনে নিয়েছিলেন। সেই ইহুদি তৎক্ষণাৎ ইসলাম গ্রহণ করে বলেছিলেন, “যে ধর্মের কারণে বিচারক খলিফার বিরুদ্ধে রায় দেয়, তা সত্য ধর্ম না হয়ে পারে না।”
যুদ্ধের ময়দানে
ভোরের আলো কিছুটা ফুটে উঠতেই নবিজি (সা) কুরাইশ বাহিনীকে দেখতে পেলেন। তিনি আবারও আল্লাহর দরবারে হাত তুলে কুরাইশদের বিরুদ্ধে প্রার্থনা জানালেন:
“হে আল্লাহ, এরা সেই কুরাইশ যারা গর্ব ও ঔদ্ধত্য নিয়ে আপনাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে এখানে এসেছে, এবং আপনার রসুলকে প্রত্যাখ্যান করেছে ।
হে আল্লাহ, আমাদের সাহায্য করুন যার প্রতিশ্রুতি আপনি দিয়েছেন। হে আল্লাহ, আমাদের সাহায্য করুন যার প্রতিশ্রুতি আপনি দিয়েছেন।
হে আল্লাহ, আমাদের সাহায্য করুন যার প্রতিশ্রুতি আপনি দিয়েছেন।
হে আল্লাহ, আপনি আজ তাদের ধ্বংস করুন। ” তিনি এভাবে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দোয়া করতে থাকেন ।
আরও পড়ুনঃ