ওহুদের যুদ্ধের জন্য কুরাইশদের প্রস্তুতি | ওহুদের যুদ্ধ-১ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

ওহুদের যুদ্ধের জন্য কুরাইশদের প্রস্তুতি | ওহুদের যুদ্ধ-১, ইবনে ইসহাকের বর্ণনা অনুসারে, আবু সুফিয়ান কাফেলা নিয়ে ফিরে এসে বদরের যুদ্ধের ফল জানার পরই মনস্থির করে যে তাকে আরেকটি যুদ্ধ করতে হবে। বদরের যুদ্ধ ঘটেছিল দ্বিতীয় হিজরির ১৭তম রমজানে। আর ওহুদের যুদ্ধ ঘটতে চলেছিল তৃতীয় হিজরির শাওয়াল মাসে। অর্থাৎ পুরো এক বছর ধরে এই যুদ্ধের জন্য পরিকল্পনা চলেছিল ।

 

ওহুদের যুদ্ধের জন্য কুরাইশদের প্রস্তুতি | ওহুদের যুদ্ধ-১ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

ওহুদের যুদ্ধের জন্য কুরাইশদের প্রস্তুতি | ওহুদের যুদ্ধ-১ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

সাফওয়ান ইবনে উমাইয়া ও ইকরিমা ইবনে আবি জেহেল- এই দুজনেই বদরের যুদ্ধে তাদের পিতাকে হারিয়েছে। তাই আবু সুফিয়ান সাফওয়ান ও ইকরিমাকে সঙ্গে নিয়ে কুরাইশদের প্রতিটি পরিবারের কাছে গিয়ে বলল, তারা বদরের কাফেলা থেকে যা কিছু লাভ করেছিল তা যেন ফিরিয়ে দেয়। লক্ষ করুন, বদর থেকে আসা কাফেলা কিন্তু মক্কায় নিরাপদেই পৌঁছেছিল। এখন আবু সুফিয়ান প্রত্যেকের কাছে লভ্যাংশ ফেরত চাইছে । এভাবেই আবু সুফিয়ান বদরের যুদ্ধের ঠিক পরেই পরবর্তী যুদ্ধের প্রস্তুতির জন্য কুরাইশদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করেছিল।

আল্লাহ তায়ালা বদরের যুদ্ধের ঠিক পরপরই এই আয়াত নাজিল করেন: “(দেখো) নিশ্চয়ই যারা কুফরি করেছে তারা তাদের ধনসম্পদ ব্যয় করে আল্লাহর পথে মানুষকে বাধা দেওয়ার জন্য। তারা ধনসম্পদ ব্যয় করতেই থাকবে, তারপর তা তাদের মনস্তাপের কারণ হবে। তারপর তারা পরাজিত হবে, আর যারা কুফরি করে তাদের জাহান্নামে একত্র করা হবে।” [8:36] আল্লাহ এই আয়াতে ওহুদের যুদ্ধের ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। অর্থাৎ বদরের সময়েই আল্লাহ মুসলিমদের ওহুদের ব্যাপারে জানিয়ে দিয়েছিলেন, যদিও তাঁরা সেই সময় এর অর্থ বুঝতে পারেননি।

 

islamiagoln.com google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

একটি ব্যাপক যুদ্ধ পরিচালনার উদ্দেশ্যে কুরাইশরা মক্কা ও আশেপাশের অন্য উপজাতিগুলোর সাহায্য নেওয়ার উদ্যোগ নিল। আমরা জানি, ওই অঞ্চলের ব্যবসা পরিচালনায় কুরাইশরা মূল ভূমিকা পালন করত। আর অর্থনৈতিক পাইপলাইন অক্ষুণ্ণ রাখার ক্ষেত্রে উপজাতিগুলোরও ব্যবসায়িক স্বার্থ ছিল। তাই তাদেরও এ বিষয়ে বেশ আগ্রহ ছিল। কুরাইশরা প্রথমেই কিনানা ও তিহামার মতো প্রধান উপজাতিগুলো কাছে গিয়ে বলল, “তোমরা অর্থ, জনবল, অস্ত্রশস্ত্র ইত্যাদি যা আছে তা দিয়ে আমাদের সাহায্য করো।” এভাবে সব উপজাতির সমন্বয়ে ৩,০০০ লোকের এক বড়সড় সেনাবাহিনী তৈরি হয়ে গেল ।

প্রথমদিকে (যেমন বদরের যুদ্ধের সময়) দ্বন্দ্ব ও শত্রুতা সীমাবদ্ধ ছিল কুরাইশ ও নবিজির (সা) মধ্যে। ওহুদের যুদ্ধের সময়ে এসে তা আরও বিস্তৃত হয়ে ইসলাম বনাম পৌত্তলিকতায় পরিণত হয়। ইসলাম যেমন অনেক আরবকে একত্রিত করেছিল, তেমনি বিপরীত পক্ষে নবিজির (সা) প্রতি বৈরিতাও অনেক আরবকে একত্রিত করেছিল।

 

ওহুদের যুদ্ধের জন্য কুরাইশদের প্রস্তুতি | ওহুদের যুদ্ধ-১ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

হিজরতের ৩য় বছরে শাওয়াল মাসের ৭ তারিখে, বদর যুদ্ধের এক বছর পূর্ণ হওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই, কুরাইশরা ২০০ ঘোড়া ও ৭০০ বর্মসহকারে ৩,০০০ জনের এক বিশাল বাহিনী নিয়ে মক্কা থেকে মদিনার দিকে যাত্রা শুরু করে ৷ এই পথ অতিক্রম করতে তখন ১০ থেকে ১৪ দিন সময় লাগার কথা। কিন্তু যুদ্ধের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠা কুরাইশরা মাত্র সাত দিনেই সেই পথ পাড়ি দিয়ে মদিনায় পৌঁছে যায়।

তখনকার দিনে সাধারণ মানুষদের কাছে অস্ত্রশস্ত্র ও বর্ম থাকত না। ধর্ম ও অস্ত্র কিনতে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হতো। আর বেশিরভাগ অস্ত্রই সিরিয়া ও ইয়েমেন থেকে আমদানি করতে হতো বলে দাম অনেক বেশি পড়ত। তাই যুদ্ধের সময় বিজয়ী ব্যক্তির কাছে সবচেয়ে আরাধ্য ও মূল্যবান বস্তু ছিল তার পরাজিত শত্র“র কাছ থেকে পাওয়া অস্ত্র ।

ওহুদের যুদ্ধে কুরাইশদের অনেকে নিজের স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়েছিল। জানা যায়, প্রায় দুই ডজন নারী কুরাইশ বাহিনীর সঙ্গে ছিল। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিল আবু সুফিয়ানের স্ত্রী হিন্দ বিনতে উতবা। নারীরা সঙ্গে থাকার ফলে পুরুষ যোদ্ধারা উজ্জীবিত থাকবে, এই ধারণাও তাদের মনে কাজ করেছিল। নারীরা গান গেয়ে পুরুষদের উৎসাহ দিয়েছিল। তারা এমনও বলেছিল যে, যোদ্ধারা যেন যুদ্ধের ময়দানে পৌরুষের প্রমাণ রাখে, যেন হার মেনে ফিরে না আসে। কুরাইশ বাহিনীর নেতা আৰু সুফিয়ান তার দলকে দুই ভাগে ভাগ করে । ডানদিকের দলের দায়িত্ব দেয় খালিদ ইবনে ওয়ালিদকে, আর বামদিকের দলের দায়িত্ব দেয় ইকরিমা ইবনে আবি জেহেলকে।

আরও পড়ুনঃ

Leave a Comment