আল-উসাইরিম আমর ইবনে সাবিতের (রা) শাহাদাত বরণ | ওহুদের যুদ্ধ-৩, আল-উসাইরিম আমর ইবনে সাবিত ছিলেন ওহুদের যুদ্ধের আগে মদিনায় বসবাসরত অল্পসংখ্যক পৌত্তলিকদের একজন। ওহুদের যুদ্ধের দিন তিনি দেখেন, মদিনা শহর সম্পূর্ণ নীরব, কোথাও কোনো পুরুষ লোক নেই। তিনি নারীদের জিজ্ঞেস করলেন, “সাদ ইবনে মুআদ কোথায়?” নারীরা বললেন তিনি ওহুদে যুদ্ধ করতে গেছেন। উসাইরিম অন্য পরিচিত লোকদের খোঁজ নিতে গিয়ে শুনতে পেলেন, সবাই যুদ্ধে গেছেন।
আল-উসাইরিম আমর ইবনে সাবিতের (রা) শাহাদাত বরণ | ওহুদের যুদ্ধ-৩ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

অবশেষে তিনি অনুধাবন করতে পারলেন, ইসলাম এখন সত্যিই অনেক শক্তিশালী অবস্থানে চলে গেছে। তাই তিনি ওহুদের যুদ্ধের দিন সকালে (ফজর ও জোহরের মাঝামাঝি সময়ে) ইসলাম গ্রহণ করেন। তারপর যুদ্ধের জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়ে সশস্ত্র হয়ে পরিবারকে বললেন, মারা যান তাহলে তাঁর সব অর্থসম্পদ যাবে নবিজির (সা) কাছে। তিনি যদি যুদ্ধে উসাইরিম ওহুদের ময়দানে পৌঁছলে যুদ্ধরত মুসলিমরা তাঁকে দেখে বললেন, “হে উসাইরিম, তোমাকে আমাদের প্রয়োজন নেই (যেহেতু তুমি মুসলিম নও)। “
উসায়রিম: আমি এখানে যুদ্ধ করতে এসেছি।
যুদ্ধরত মুসলিমরা: তুমি কি তোমার বংশের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনের জন্য যুদ্ধ করতে চাও, না কি আল্লাহ ও তাঁর রসুলের প্রতি ভালোবাসার কারণে যুদ্ধ করতে চাও?
উসাইরিম: আমি এখন একজন মুসলিম, আমি ইসলামের স্বার্থে যুদ্ধ করতে চাই। এ কথা শোনার পর সাহাবিরা তাঁকে নবিজির (সা) কাছে নিয়ে যান।
বহু বছর পরে আবু হুরায়রা (রা) তাঁর ছাত্রদের জিজ্ঞেস করেছিলেন, “তোমাদের মধ্যে কে বলতে পারবে সেই ব্যক্তিটির নাম যিনি এক রাকাত নামাজ না পড়েও জান্নাতে প্রবেশ করবেন?” এটা তাবেয়িনদের জানা থাকার কথা না। আবু হুরায়রা পরক্ষণে নিজেই উত্তরে বলেছিলেন, “তিনি হলেন বনু আবদ আল- আশাল গোত্রের উসাইরিম।”
উসাইরিম (রা) ফজরের পরে ইসলাম গ্রহণ করেন আর জোহরের সময় আসার আগেই শহিদ হন। তাঁর ইসলাম গ্রহণের পর থেকে মৃত্যুর আগমুহূর্ত পর্যন্ত নামাজের কোনো সময় আসেনি। উসাইরিমের বিষয়ে নবিজি (সা) বলেন, “সে কাজ করেছিল খুব অল্প, কিন্তু পুরস্কার পেয়েছে অনেক বেশি। সে জান্নাতিদের একজন।”

সংবিধানকে সম্মানকারী ইহুদি মুখায়রিক
নবি করিম (সা) ওহুদের যুদ্ধে সহযোগিতার জন্য ইহুদিদের কাছে যাননি কারণ তিনি জানতেন তারা সহযোগিতা করবে না, যদিও সংবিধান অনুসারে তাদের মুসলিমদের পক্ষ নিয়ে যুদ্ধে অংশ নেওয়ার কথা। সংবিধানে উল্লেখ আছে, “যদি আমরা বাহ্যিকভাবে আক্রমণের শিকার হই, তবে আমরা এক হয়ে লড়াই করব।’ মুখায়রিক ছিলেন একজন ইহুদি। তনি তাঁর সম্প্রদায়ের লোকদেরকে উদ্বুদ্ধ করতে চেষ্টা করেছিলেন যাতে তারা মুসলিমদের সহযোগিতা করতে সাহায্যে এগিয়ে আসে। তিনি তাদের বলেছিলেন, “তোমরা তো জান, মুহাম্মদকে (সা) সাহায্য করা আমাদের দায়িত্ব!” ইহুদিরা: আমরা তো পারব না, কারণ আজ সাবাথ।
মুখায়রিক: “আজকের পরে তোমাদের আর কোনো সাবাথ যেন না আসে!” তারপর মুখায়রিক বর্ম পরে তলোয়ার নিয়ে তাঁর লোকদেরকে বলেন, “আমি যদি যুদ্ধে মারা যাই তাহলে আমার সব অর্থসম্পদ যাবে মুহাম্মদের (সা) কাছে। তারপর তিনি ওহুদে গিয়ে সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করেন, মুসলিমদের প্রাণ রক্ষা করতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত প্রাণ হারান। নবিজি (সা) মুতিম ইবনে আদির যেমন প্রশংসা করেছিলেন, তেমনি করে মুখায়রিকের প্রশংসা করে বলেন, “মুখায়রিক ইহুদিদের মধ্যে সেরা। সে আমাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছে।”