জাবির ইবনে আবদিল্লাহর (রা) কাহিনি | মহানবি মুহাম্মদের (সা) বিয়ে | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

জাবির ইবনে আবদিল্লাহর (রা) কাহিনি | মহানবি মুহাম্মদের (সা) বিয়ে, জাবির ইবনে আবদিল্লাহ ছিলেন এক বিশিষ্ট আনসারি সাহাবি। তিনি বালক বয়সেই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন; তিনি হিজরতের আগে আকাবার অঙ্গীকারনামায় সাক্ষী ও অংশগ্রহণকারী হিসেবে সবচেয়ে কম বয়সী সাহাবি ছিলেন। আল্লাহ তাঁকে দীর্ঘ জীবন দান করেছিলেন। ফলে তিনি হাদিস বর্ণনাকারীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন, সংখ্যার বিচারে শীর্ষ পাঁচজন সাহাবির অন্যতম ।

জাবির ইবনে আবদিল্লাহর (রা) কাহিনি | মহানবি মুহাম্মদের (সা) বিয়ে | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

জাবির ইবনে আবদিল্লাহর (রা) কাহিনি | মহানবি মুহাম্মদের (সা) বিয়ে | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

জাবির নিজের জবানিতে এই কাহিনিটি বর্ণনা করেছেন: “আমরা ধাত আল-রিকার গাজওয়া থেকে ফিরে আসছিলাম। আমার উটটি ছিল সবচেয়ে বয়স্ক ও দুর্বল, তাই আমি পুরো বাহিনীর পেছনে পড়ে গিয়েছিলাম। আমার মন খুব খারাপ ছিল, কারণ আমার পিতা (আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে হারাম) সদ্যই ওহুদের যুদ্ধে শহিদ হয়েছেন: মৃত্যুর সময় তাঁর বড় অঙ্কের ঋণ ছিল। আমার ছোট সাতটি বোন ছিল, কিন্তু কোনো ভাই ছিল না; আমি ছিলাম ভাইবোনদের মধ্যে সবচেয়ে বড়। আমার বয়স তখন মাত্র ১৬-১৭ বছর ।

সব উদ্বেগ ও পারিবারিক দায়িত্বের বোঝা আমার ওপর এসে পড়েছিল। সেই সময় আমি একটি কন্ঠস্বর শুনতে পেলাম, ‘পেছনে যে পড়েছে সে কে?’ আমি তাকিয়ে দেখলাম তিনি নবি করিম (সা)। আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসুল, আমি জাবির।’

নবিজি (সা): তোমাকে এত হতাশ দেখাচ্ছে কেন? আমি: আমার পিতা সদ্য মারা গিয়েছেন, আমার সাত বোন, একমাত্র সম্বল এই উট ।

নবিজি (সা): তুমি বিয়ে করেছ?

আমি: হ্যাঁ। আমি বিয়ে করেছি।

নবিজি (সা): কাকে বিয়ে করেছ? কুমারীকে না বিধবাকে? (অন্য এক ভাষ্য অনুসারে তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন: যুবতী নাকি বয়স্ক মহিলা?)

আমি: বয়স্ক মহিলা এবং বিধবা । নবিজি (সা): তুমি কোনো যুবতীকে বিয়ে করলে না কেন? তুমি তাকে আনন্দ দিতে, সে-ও তোমাকে আনন্দ দিত। তুমি তাকে হাসাতে, সে-ও তোমাকে হাসাত। আমি: হে আল্লাহর রসুল, আমি এমন কাউকে বিয়ে করতে চেয়েছিলাম যে আমার বোনদের দেখভাল করবে, সে নিজেই যেন তাদের মতো একজন না হয়ে যায় (উল্টো যার দেখভাল করতে হবে)।

 

islamiagoln.com google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

নবিজি (সা): তুমি ঠিক করেছ।” এ থেকে দেখা যাচ্ছে, যুবতী, বয়স্ক, কুমারী বা বিধবা বিয়ে করার বিষয়টি পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে। এ ক্ষেত্রে জাবির তাঁর চেয়ে বেশি বয়স্ক কাউকে বিয়ে করেছিলেন এবং তা সেই পরিস্থিতিতে তাঁর জন্য যথাযথ ছিল।

নবিজি (সা) নিজের উট থামিয়ে জাবিরকে তাঁর উটটি থামাতে বললেন, তারপর জাবিরের উটে চড়ে বললেন, “বিসমিল্লাহ।” তারপর তিনি উটটিকে চলার নির্দেশ দিলেন। জাবিরের কথায়, “মুহূর্তের মধ্যেই সেটি আমার দেখা সবচেয়ে দ্রুতগামী উটে পরিণত হলো। আমি এগিয়ে গিয়ে তাঁকে ধরার চেষ্টা করলাম।” নবিজিকে (সা) এখন বেশ খুশি মনে হচ্ছে। জাবির তাঁর কাছাকাছি পৌঁছলে তিনি তাঁকে বললেন, “এটা (উট) আমার কাছে বিক্রি করো।” জাবির তাঁর বোনদের কথা ভেবে বললেন, “না।”

নবিজি (সা) আবার বললেন, “এটা আমার কাছে বিক্রি করো।”

জাবির যখন বুঝতে পারলেন যে নবিজি (সা) সত্যিই তাঁর উটটি কিনতে চাইছেন, তখন তিনি তাঁকে বললেন, “এটা আপনার জন্য।” (অর্থাৎ হে আল্লাহর রসুল, আপনি এই উটটি আমার কাছ থেকে উপহার হিসেবে নিতে পারেন।) নবিজি (সা) বললেন, “না, এটা আমার কাছে বিক্রি করে দাও।”

জাবির বললেন, “আপনি কত দাম দেবেন?”

নবিজি (সা) বললেন, “একটি দিরহাম।”

এটা উটের মূল্যের তুলনায় কিছুই নয়। জাবির এবারও বললেন “না।”

কিছুক্ষণ পরে তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, “কত দেবেন?” নবিজি (সা) রসিকতা করে চলেছেন, এবার তিনি বললেন, “দুই দিরহাম।” জাবির রাজি নন। এভাবে অবশেষে উটটির মূল্য পৌঁছল ৪০ দিরহামে। তখন জাবির তাতে রাজি হয়ে বললেন, “তবে আমাকে প্রথমে এটাতে চড়ে মদিনায় ফিরে যেতে দিন, তারপর আমি আপনার কাছে বিক্রি করব।”

নবিজি (সা) উটটিতে চড়ার পর সেটির যে তেজী ভাব এসেছিল তা এখনও কমেনি। ফলে জাবির এখন সবার সামনে চলে এসেছেন। তিনি দ্রুত বাড়ি ফেরার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠলেন। কিন্তু নবিজি (সা) তাঁকে বললেন, “হঠাৎ করে মধ্যরাতে বাড়িতে প্রবেশ কোরো না; ঘোষণাকারী প্রথমে আমাদের ফিরে আসার খবরটি শহরে ঘোষণা করুক, তোমার পরিবার জানুক যে তুমি ফিরে এসেছ, যাতে সে (তোমার স্ত্রী) পরিপাটি হয়ে সেজেগুঁজে তোমার জন্য প্রস্তুত থাকতে পারে।” নবিজি (সা) অসঙ্কোচে এবং খোলাখুলিভাবেই কথাগুলো বলেছিলেন। তিনি এর মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হওয়া এবং সেজন্য পরিপাটি হয়ে পোশাক পরাকে উৎসাহিত করছেন।

 

জাবির ইবনে আবদিল্লাহর (রা) কাহিনি | মহানবি মুহাম্মদের (সা) বিয়ে | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

পরদিন সকালে জাবির নবিজির (সা) মসজিদে এসে হাজির হলে নবিজি (সা) তাকে জিজ্ঞেস করলেন তিনি দুই রাকাত নামাজ পড়েছেন কি না। জাবির না-সূচক উত্তর দিয়ে তখনই নামাজটি পড়ে ফেললেন। নবিজি (সা) বেলালকে ডেকে (রা) বললেন, “হে বিলাল, ৪০ উকিয়া ওজন করো এবং তাকে কিছু বেশি দিয়ে দাও।”

জাবির টাকা নিয়ে চলে যাচ্ছিলেন। নবিজি (সা) তাঁকে আবার ডেকে বললেন, “হে জাবির, যাচ্ছ কোথায়?”

জাবির: বাড়িতে । নবিজি (সা) ফিরে এসো। তুমি ভুলে গিয়েছিলে যে তোমার উটটি এখানে রয়ে গেছে। জাবির। হে আল্লাহর রসূল, আমি তো এটি আপনার কাছে বিক্রি করে দিয়েছি। নবিজি (সা): হে জাবির, তুমি কি ভেবেছিলে যে আমি তোমাকে ঠকাব? তুমি টাকাটা রেখে দাও, এবং তোমার উটটি নিয়ে যাও। নবিজি (সা) এই চালাকি করেছিলেন যাতে টাকা নেওয়ার সময় জাবিরের এমন মনে না হয় যে তিনি কোনো দান গ্রহণ করছেন ।

আরও পড়ুনঃ

Leave a Comment