কুরাইশরা উসমানকে (রা) ফেরত পাঠাল | হুদায়বিয়ার সন্ধি (চুক্তি)-৩, রিদওয়ানের অঙ্গীকারের খবরও এক সময় মক্কায় পৌঁছে গেল। যদিও আমরা বিস্ত ারিত জানি না, তবু ধারণা করা যায় যে, কুরাইশরা অঙ্গীকারের খবরে আতঙ্কিত হয়ে উসমানকে (রা) তাড়াতাড়ি ফেরত পাঠিয়ে দিল। উসমান (রা) ফিরে আসছেন এই খবর পেয়ে কিছু মুসলিম বলাবলি করছিল, “তিনি কত ভাগ্যবান! তিনি নিশ্চয়ই ভেতরে গিয়ে তাওয়াফ করেছেন।” কিন্তু নবিজি (সা) বললেন, “আমার মনে হয় না যে, সে তাওয়াফ করবে। আমরা যখন করিনি, তখন সে কীভাবে তা করবে?” নবিজি (সা) ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন যে উসমানের (রা) আদব শিষ্টাচার তাঁকে কখনই তা করতে দেবে না ।
কুরাইশরা উসমানকে (রা) ফেরত পাঠাল | হুদায়বিয়ার সন্ধি (চুক্তি)-৩ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

তবে সাহাবিদের ওই কথোপথন থেকে আমরা বুঝতে পারি তাঁরা তাওয়াফ ও ওমরা করতে কতটা আগ্রহী ছিলেন। ছয় বছর আগে তাঁদের মক্কা থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। এই সময়ে তাঁরা কেউ কাবাঘর দেখেনি। তাঁরা তাওয়াফকে এতটাই মিস করছিলেন তাঁদের মনে কিঞ্চিৎ ঈর্ষা জেগেছিল: উসমান নিশ্চয়ই তাওয়াফ করেছেন, কিন্তু আমরা করতে পারিনি। তারপর তিনি ফিরে এলে তাঁরা তাঁকে ঘিরে ধরে বললেন, “কাবাঘর দেখে কি আপনার আশ মিটেছে?” উত্তরে উসমান (রা) বললেন, “আমাকে নিয়ে তোমরা এমন বাজে ধারণা পোষণ করছ? তোমরা কেমন করে ভাবলে যে, নবিজি (সা) এখানে আছেন আর আমি ওখানে থাকা অবস্থায় তাওয়াফ করব? আল্লাহর কসম, আমি যদি এক বছর ধরেও মক্কায় থাকতাম, তাহলেও আমি নবিজি (সা) তাওয়াফ করার আগ পর্যন্ত তা করতাম না।”
কুরাইশরা আনুষ্ঠানিক প্রতিনিধিদল পাঠালো

আল-বায়হাকির বর্ণনা অনুসারে, রিদওয়ানের অঙ্গীকারের খবর কুরাইশদের কাছে পৌঁছলে তারা বেশ ভয় পেয়ে যায়। উসমান ইবনে আফফানকেও তারা তাড়াতাড়ি ছেড়ে দেয় এবং মুসলিমদের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য একটি আনুষ্ঠানিক প্রতিনিধিদল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। প্রথমে তারা মিকরাজ ইবনে হাফস নামের একজনকে পাঠাল। তাকে তারা কিছুটা তাড়াহুড়া করেই পাঠিয়েছিল।
মিকরাজের আসলে কোনো পরিকল্পনা বা এজেন্ডা ছিল না। তাকে দেখে নবিজি (সা) সাহাবিদের কাছে মন্তব্য করেন, “সে একজন মন্দ লোক । এই উদ্যোগে কোনো কাজ হবে না।” মিকরাজ এলে নবিজি (সা) তার সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন। সে এমন সব অগ্রহণযোগ্য শর্ত দেয় যে, আলোচনা শেষ পর্যন্ত আর চুক্তির দিকে এগোয় না। তারপর কুরাইশদের তরফ থেকে আরেকটি প্রতিনিধিদল আসে। সুহায়েল ইবনে আমরের নেতৃত্বে এই দলে মোট তিনজন সদস্য ছিল।
সুহায়েলকে আসতে দেখে নবিজি (সা) সাহাবিদের বললেন, “সুহায়েল এসেছে, আল্লাহ এখন তোমাদের জন্য কাজ সহজ করে দিয়েছেন।” সুহায়েল শব্দটি মূল ধাতু ‘সাহল’ থেকে এসেছে, যার অর্থ ‘সহজ করা’ অথবা ‘খুলে যাওয়া’। তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, সুহায়েল আসার মাধ্যমে মুসলিমদের ইপ্সিত লক্ষ্যে পৌঁছানো সহজ হবে বা সমাধানের দ্বার খুলে যাবে।
আরও পড়ুনঃ