ভাল ব্যবহারের ফজিলত – মানুষ তার উত্তম ব্যবহার ও চরিত্র দ্বারা পরিবারসহ সমাজকে অলোকিত করে থাকে। যে সুন্দর চরিত্রের প্রতিচ্ছবি দেখা যায় নবী করিম (সাঃ) জীবনে। আল্লাহর নবী কিভাবে মানুষের সাথে ভাল ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন সে বিষয়ে জানতে ভিডিওটি সম্পূর্ণ দেখুন।
ভাল ব্যবহারের ফজিলত
কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমি কি লক্ষ করো না, আল্লাহতায়ালা কেমন উপমা বর্ণনা করেছেন, পবিত্র বাক্য হলো পবিত্র বৃক্ষের মতো। তার শেকড় মজবুত এবং শাখা আকাশে উত্থিত। সে পালনকর্তার নির্দেশে অহরহ ফল দান করে। আল্লাহ মানুষের জন্য দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেন, যাতে তারা চিন্তাভাবনা করে।’ (সুরা ইবরাহিম : ২৪-২৫)
কোরআনে কারিমের অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে, ‘সমান নয় ভালো ও মন্দ। জবাবে তাই বলুন যা উৎকৃষ্ট। তখন দেখবেন আপনার সঙ্গে যে ব্যক্তির শত্রুতা রয়েছে, সে যেন অন্তরঙ্গ বন্ধু।’ (সুরা হা মিম আস সাজদা : ৩৪)

উল্লিখিত আয়াতসমূহে স্পষ্টভাবে প্রকাশ পেয়েছে ভালো কথা ও ব্যবহারের গুরুত্ব। আসলে সাদা আর কালো যেমন সমান হতে পারে না, রাত এবং দিন যেমন এক হতে পারে না, হিমশীতল ছায়া এবং প্রখর রৌদ্র যেমন পারে না একই মেরুতে অবস্থান করতে, উঁচু আর নিচু যেমন চলতে পারে না একই সমান্তরালে, অন্ধ এবং চক্ষুষ্মান মানুষ যেমন কখনো হয় না একই মর্যাদাপূর্ণ, বাক্সম্পূর্ণ এবং বাক-প্রতিবন্ধী যেমন সমান নয়, মূর্খ এবং জ্ঞানী যেমন এক হয় না, মন্দ যেমন পারে না ভালোকে অতিক্রম করতে ঠিক তেমনি ভালো কথা এবং মন্দ কথা কখনো সমান হতে পারে না।
মন্দ কথা, খারাপ কথা, বাজে কথা, অসংলগ্ন কথা, অপ্রয়োজনীয় কথা, অবিবেচনা-প্রসূত কথা, অর্থহীন কথা মানুষকে নামিয়ে দেয় সর্বনিম্নস্তরে। সমাজের সবচেয়ে নিকৃষ্ট জীব হিসেবে সে পরিগণিত হয়। ঘৃণা, ধিক্কার, অসম্মানের অভিশাপ আটকে যায় তার ললাটে। মন্দ কথা রোধে আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিমে সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘নম্র কথা বলে দেওয়া এবং ক্ষমাপ্রদর্শন করা ওই দান-খয়রাত অপেক্ষা উত্তম, যার পরে কষ্ট দেওয়া হয়। আল্লাহতায়ালা সম্পদশালী, সহিষ্ণু।’ (সুরা বাকারা : ২৬৩)
কোরআনে কারিমের অন্যত্র আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ কোনো মন্দ বিষয় প্রকাশ করা পছন্দ করেন না। তবে কারও প্রতি জুলুম হয়ে থাকলে সে কথা আলাদা। আল্লাহ শ্রবণকারী, বিজ্ঞ।’ (সুরা নিসা : ১৪৮)
এভাবে কোরআনে কারিমের বিভিন্ন স্থানে মিথ্যা কথা বলা থেকে যোজন যোজন দূরে থাকতে, কারও প্রতি অপবাদ না দিতে, মানুষকে বিদ্রƒপ ও মন্দ নামে না ডাকতে, অনুমান করা থেকে বিরত থাকতে, কারও দোষ না খুঁজতে, মানুষের গিবত না করতে বারবার বলা হয়েছে নানা প্রসঙ্গে। নবী করিম (সা.) একাধিক হাদিসে অপ্রয়োজনীয়, মিথ্যা, অনর্থক কথা বলতে নিষেধ করেছেন। এক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস স্থাপন করে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়, মেহমানের সম্মান করে এবং কথা বলার সময় উত্তম কথা বলে অথবা চুপ করে থাকে।’ (সহিহ বুখারি : ৬০১৮)
আরেক হাদিসে বলা হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘মুনাফিক চেনার লক্ষণ হলো চারটি। ১. যে কথায় কথায় মিথ্যা কথা বলে, ২. যে ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করে, ৩. তার কাছে কোনো জিনিস আমানত রাখলে খেয়ানত করে এবং ৪. যে ঝগড়া বিবাদে অশ্লীল গালাগালপূর্ণ শব্দ ব্যবহার করে।’ (সহিহ বুখারি : ৩৪)
নীরবতা, নির্জনতা, স্থির ও সমাজ-বিচ্ছিন্ন একক জীবন ইসলাম নয়। ইসলাম কাউকে কথা বলতে নিষেধ করে না। হাদিসে এটা স্পষ্ট যে, নবী করিম (সা.)-এর পারিবারিক জীবন ছিল, জীবনে হাসি-তামাশা ছিল, ছিল তার জীবনে কোমল ব্যবহার। তাই আমাদেরও নিজ নিজ পরিবারের সঙ্গে, প্রতিবেশীর সঙ্গে, কর্মক্ষেত্রের মানুষের সঙ্গে, সমাজের মানুষের সঙ্গে হাসিমুখে, হাস্যোজ্জ্বল চেহারা নিয়ে কথা বলতে হবে। কোমল আচরণ ও ভালো ব্যবহার করতে হবে। ভালো ব্যবহার ও সুন্দর আচরণ ইমানের অন্যতম শিক্ষা। তাই সর্বাবস্থায় সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে ভদ্র আচরণ করা ইমানদার ব্যক্তির কর্তব্য।
ভাল ব্যবহারের ফজিলত নিয়ে বিস্তারিত ঃ
আরও দেখুনঃ