প্রাক-ইসলামি আরবে ভিন্ন ভিন্ন পৌত্তলিক প্রথা | ইসলাম-পূর্ব বিশ্বে ধর্মীয় পরিস্থিতি, ১) জাহেলি যুগে কোনো কাফেলা মক্কা ছেড়ে যাওয়ার সময় কাবা থেকে এক টুকরো পাথর কেটে নিয়ে যেত। পরে তারা পাথরটিকে প্রতিমা হিসেবে পূজা করা শুরু করাত। কিন্তু মুসলিম হিসেবে আমরা কাবার ইটকে আলাদাভাবে পবিত্র বস্তু বলে বিবেচনা করি না। আমরা জানি, কাবাঘরের স্থানটি পবিত্র, কিন্তু তার ইট বা বিল্ডিং নয়। অনেকেই জানি না যে, অন্য কোনো স্থাপনার মতোই কাবাঘরের কাঠামো কয়েক দশক পরপরই পুনর্নির্মাণ করা হয়। কিন্তু প্রাক-ইসলামি যুগের মানুষেরা ব্যাপারটি বুঝতে না পারার ফলে সেখানে পৌত্তলিকতা জায়গা করে নিয়েছিল।

প্রাক-ইসলামি আরবে ভিন্ন ভিন্ন পৌত্তলিক প্রথা | ইসলাম-পূর্ব বিশ্বে ধর্মীয় পরিস্থিতি | মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ জীবন
২) এক সাহাবি বর্ণনা করেছেন, “ইসলাম আসার আগে আমরা পাথরের পূজা করতাম। যে পাথরটিকে পূজা করছিলাম তার চেয়ে সুন্দর আরেকটি পাথর দেখতে পেলেই আমরা পুরানোটিকে ফেলে দিয়ে নতুনটিকে পুজা করতে শুরু করে দিতাম। মরুভূমিতে ভ্রমণ করার সময় কোনো প্রস্তরখণ্ড না পেলে আমরা বালু সংগ্রহ করে একটি গর্তের মধ্যে রেখে ছাগলের দুধ ঢেলে একটু শক্ত আকার দিয়ে তার চারপাশে তাওয়াফ করতাম।”
৩) প্রচলিত কাহিনিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ন্যক্কারজনক কাহিনি হলো “নায়িলা’ এবং ‘আসফ’ নামের দুটি প্রতিমা নিয়ে। নায়িলার প্রতিমাকে সাফায় এবং আসফের প্রতিমাকে মারওয়াতে রাখা হয়েছিল। প্রাক-ইসলামি আরবে কুরাইশরা ‘সাই” করার সময় প্রতিবার নায়িলা ও আসফের প্রতিমা দুটোকে স্পর্শ করত। ইসলাম গ্রহণ করার পর মুসলিমরা দ্বিধায় পড়ে গেল এই ভেবে যে নায়িলা ও আসফকে স্মরণ করার উদ্দেশ্যে সাই করা ঠিক হচ্ছে কি না। তখন আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরানে জানিয়ে দিলেন, “নিশ্চয়ই সাফা ও মারওয়া পাহাড় দুটো) আল্লাহর নিদর্শনগুলোর অন্যতম।” [সুরা বাকারা, ২:১৫৮]

অর্থাৎ যেহেতু পাহাড় দুটি নায়িলা ও আসফের প্রতিমা তৈরির আগে থেকেই ছিল তাই এখানে নিজেদের দোষী ভাবার কোনো কারণ নেই। আয়েশা (রা) বলেছেন, “ছোটবেলা থেকেই আমরা নায়িলা ও আসফের গল্প শুনতাম।” ইতিহাসে আছে যে তারা দুজন প্রেমিক-প্রেমিকা ছিল। ঘনিষ্ঠ হওয়ার মতো আর সুবিধাজনক কোনো জায়গা খুঁজে না পেয়ে তারা কাবার অভ্যন্তরেই মিলিত হয়েছিল। শাস্তি হিসেবে আল্লাহ তাদেরকে তৎক্ষণাৎ পাথর বানিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু কুরাইশরা যখন তাদের খুঁজে পেল, তখন তারা একে একটি অলৌকিক ব্যাপার হিসেবে বিবেচনা করে পাথরের প্রতিমা দুটিকে সাফা ও মারওয়ার ওপর বসিয়ে দিল।
৪) মক্কা বিজয়ের সময় কাবাঘরের চারপাশে বিভিন্ন আকার ও আকৃতির প্রায় ৩৬০টি প্রতিমা ছিল। সেগুলোর মধ্যে কিছু ছিল মানুষের আকারে, কিছু ছিল প্রাণীর আকারে। তবে বেশিরভাগই ছিল অর্ধেক মানুষের আর অর্ধেক প্রাণীর ঠিক যেমন ছোটদের রূপকথার গল্পগুলোতে বর্ণনা রয়েছে।
৫) কুরাইশদের একটা ধারণা ছিল, ফেরেশতারা আল্লাহর কন্যা। এই ধারণা থেকে তারা ফেরেশতাদের পুজা করত।
৬) আমরা মুসলিমরা যেমন একক সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করি, আরবদের সেরকম বিশেষ কোনো ধর্মবিশ্বাস ছিল না। এটি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রতিমাপূজার সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। হিন্দুদের একক কোনো ধর্মবিশ্বাস নেই। এক হিন্দু এক দেবতার উপাসনা করতে পারে, আবার অন্যজন অন্য দেবতার উপাসনা করতে পারে। তাদের দেবতারা কী করতে পারে বা করতে পারে না সে সম্পর্কে তারা প্রত্যেকেই আলাদা আলাদা ধারণা পোষণ করে থাকে। প্রাক-ইসলামি আরবদের ক্ষেত্রেও একই কথা বলা যায়। সেখানে তাদের একক কোনো ধর্মবিশ্বাস ছিল না। একজনের বিশ্বাসের সঙ্গে অন্যজনের বিশ্বাসের মিল ছিল না। তবে তারা সবাই এ বিষয়ে একমত ছিল যে সৃষ্টিকর্তার কাছে পৌঁছার জন্য তাদের প্রতিমাপূজা করার প্রয়োজন রয়েছে।
আরো পড়ুনঃ