মহানবি মুহাম্মদের শারীরিক বৈশিষ্ট্যসমূহ | মহানবি মুহাম্মদের (সা) বিশেষ বৈশিষ্ট্যসমূহ-২, মহানবি মুহাম্মদের (সা) শারীরিক কিছু বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করব। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা প্রত্যেক নবিকেই সুন্দরতর বৈশিষ্ট্য এবং চমৎকার আচরণ দিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। যেমন আমরা জানি, ইউসুফ (আ) দেখতে খুবই সুদর্শন ছিলেন। বলা হয়ে থাকে, তাঁর সৌন্দর্য পুরো মানবজাতির সমস্ত সৌন্দর্যের অর্ধেক। আবার কিছু কিছু স্কলারের মতে আমাদের প্রিয় নবি মুহাম্মদ (সা) ছিলেন জগতের সবচেয়ে সুদর্শন পুরুষ, এমনকি ইউসুফের (আ) চেয়েও। বিভিন্ন সূত্র থেকে আমরা মহানবি মুহাম্মদের (সা) শারীরিক বৈশিষ্ট্যগুলোর বিবরণ জানতে পারি। তিনি মারা যাওয়ার পর রুবাইয়ি বিনতে মুয়াভিদ নামের এক সাহাবিকে তাঁর ছেলে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘নবিজি (সা) দেখতে কেমন ছিলেন?’ রুবাইয়ি জবাবে বলেছিলেন, “তুমি যদি তাঁকে দেখ তবে তোমার মনে হবে তিনি যেন এক উদিত সূর্য।”

মহানবি মুহাম্মদের শারীরিক বৈশিষ্ট্যসমূহ | মহানবি মুহাম্মদের (সা) বিশেষ বৈশিষ্ট্যসমূহ-২ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ জীবন
অন্যদিকে, কাব ইবনে মালিক নামের অন্য সাহাবি নবিজিকে (সা) এভাবে বর্ণনা করেছিলেন, “যখনই নবিজি (সা) খুশি হতেন, তখনই তাঁর মুখ পূর্ণিমার মতো আলোকিত হয়ে উঠত।” আবার একজন বলেছেন তিনি উদিত সূর্যের মতো, আরেকজন বলেছেন তিনি পূর্ণিমার চাঁদের মতো! এখানে লক্ষণীয়, সাহাবিরা যা কিছুকে সুন্দর বলে বিবেচনা করতেন, তার সঙ্গেই তাঁদের প্রিয় নবির (সা) তুলনা করেছেন।
এ প্রসঙ্গে আমর ইবনুল আস (রা) থেকে পাওয়া বর্ণনাটি উল্লেখ করা যায়। আমর মাত্র কয়েক বছরের জন্য সাহাবি হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে তিনি তাঁর জীবদ্দশায় বলতেন, “নবিজির (সা) মুখের দিকে তাকানোর চেয়ে প্রিয় আমার কাছে আর কিছুই ছিল না। তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকার চেয়ে মধুর পৃথিবীতে আর কিছুই নেই। তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকার তৃষ্ণা কখনই মিটবার নয়। তারপরও যদি কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করে নবিজি (সা) দেখতে কেমন ছিলেন, আমি তার উত্তর দিতে পারব না। তাঁর দিকে অপলকভাবে তাকিয়ে থাকার ইচ্ছে থাকলেও এক সশ্রদ্ধ ভয়ের কারণে তা করতে পারতাম না, সব সময় মাথা নিচু করে থাকতাম।”
মহানবি মুহাম্মদ (সা) সম্পর্কে বর্ণনার বেশিরভাগই এসেছে তুলনামূলকভাবে নবীন ও বয়োকনিষ্ঠ সাহাবিদের কাছ থেকে। আনাস ইবনে মালিক (রা) মাত্র সাত বছর বয়সে নবিজির (সা) সান্নিধ্যে এসেছিলেন। তিনি সারাদিন তাঁর সেবা-যত্নে নিজেকে নিয়োজিত রাখতেন। তাঁর ভাষায়, “রসুল (সা) এতটা লম্বা ছিলেন না যে তাঁকে সবার মধ্যে আলাদাভাবে চোখে পড়বে।

তিনি খুব বেশি ফর্সাও ছিলেন না, আবার গাঢ় বাদামি বর্ণেরও ছিলেন না। [এখানে উল্লেখ্য, আরবরা সাদা রং বলতে হালকা বাদামি রং বোঝায়। সুতরাং তিনি হালকা বাদামি রঙের ছিলেন বলেই মনে হয়।] নবিজির (সা) চুলগুলো কোঁকড়ানোও ছিল না, আবার সোজাও ছিল না। আমি তাঁর হাতের তুলনায় মোলায়েম কোনো মখমল বা রেশম জীবনে কখনও দেখিনি। এমনকি আমি তাঁর ঘামের গন্ধের চেয়ে সুগন্ধযুক্ত কোনো পারফিউমও কখনও পাইনি।”
আল-বারা ইবনে আজিব এভাবে বর্ণনা করেছেন, “নবিজি (সা) মাঝারি আকৃতির ছিলেন, এবং তাঁর কাঁধ ছিল প্রশস্ত। তাঁর চুল ও দাড়ি ছিল খুবই ঘন। তিনি কানের পাশের ‘জুলফি’ পর্যন্ত চুল বড় করে রাখতেন।” আলি ইবনে আবি তালিব বর্ণনা করেছেন, “নবিজির (সা) মুখাবয়ব তেমন মাংসল ছিল না এবং গোলাকারও ছিল না; বরং কিছুটা ডিম্বাকৃতির ছিল।
তাঁর ত্বক ছিল সাদাটে (হালকা সাদা), চোখ ছিল বড় এবং চোখের পাপড়িগুলো ছিল। বেশ বড় বড় ও কালো। তাঁর কাঁধের পেছনের দিকটি ছিল প্রশস্ত। সারা শরীরে তেমন একটা লোম ছিল না, তবে বুক থেকে নাভি পর্যন্ত সূক্ষ্ম একটা লোমরেখা ছিল। তিনি একটু দ্রুতগতিতে হাঁটতেন, দেখে মনে হতো যেন কোনো ঢালু পথ দিয়ে হাঁটছেন। কোনো কিছু ঘুরে দেখতে গেলে শুধু তাঁর মুখই না, পুরো শরীরটাকে নিয়েই ঘুরতেন। তাঁর দুই কাঁধের মাঝে ছিল নবুয়তের সিলমোহর। এটি তার কাঁধের ব্লেডের মাঝে অতিরিক্ত কিছু লোম, যার রং স্বাভাবিক রঙের চেয়ে একটু আলাদা। “
যে-ই নবিজিকে (সা) হঠাৎ করে দেখত, সে-ই সমীহ জাগানো বিস্ময়ে দাঁড়িয়ে পড়ত। জাবির ইবনে সামুরা (রা) নামের এক সাহাবি একদিন মধ্যরাতে বাড়ি ফিরছিলেন। সেটি ছিল পূর্ণিমার রাত। পথিমধ্যে তিনি নবিজিকে (সা) দেখতে পেলেন। জাবিরের (রা) কথায়, “আমি একবার তাঁর মুখের দিকে তাকালাম, আর একবার পূর্ণিমার চাঁদের দিকে তাকালাম। আমার চোখে তাঁকে পূর্ণিমার চাঁদের চেয়েও বেশি সুন্দর মনে হয়েছিল।”
অনেক মানুষ মহানবি মুহাম্মদকে (সা) কেবল সামনাসামনি দেখেই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। তাদের মধ্যে সবচেয়ে খ্যাতিমান ছিলেন মদিনার ইহুদিদের প্রধান বাবাই আবদুল্লাহ ইবনে সালাম। হিজরতের সময় নবিজি (সা) যেদিন মলিনাতে প্রবেশ করেন, সেদিনই আবদুল্লাহ ইবনে সালাম প্রথম জানতে পারেন যে এই ব্যাক্তিটি নিজেকে নবি হিসেবে দাবি করেছে। আবদুল্লাহ ইবনে সালাম নবিজির (সা) সঙ্গে নিজের সাক্ষাতের ঘটনাটি এভাবে বর্ণনা করেছেন, “আমি তাঁকে দেখেই বুঝতে পারলাম এটি কোনো মিথ্যাবাদীর চেহারা হতে পারে না।” প্রথম দর্শনেই, শুধুমাত্র নবিজির (সা) চেহারা দেখেই তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন।
আরো পড়ুনঃ