আল্লাহ কেন মুমিনদের পরীক্ষা করেন? | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

আল্লাহ কেন মুমিনদের পরীক্ষা করেন? | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন, অনেক মানুষের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে, আল্লাহ যদি নবি ও মুমিনদের ভালোই বাসেন, তাহলে কেন তাদেরকে এভাবে পরীক্ষা করেছেন? এর পেছনে প্রজ্ঞাই বা কী? কুরাইশদের এত নিপীড়ন সত্ত্বেও কেন তিনি মুমিনদেরকে রক্ষা করেননি? কেন তাদেরকে তাৎক্ষণিকভাবে বিজয় দান করেননি? পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানব মহানবি মুহাম্মদকে (সা) নির্যাতনের শিকার হতে দেওয়ার পেছনের উদ্দেশ্যই বা কী?

 

আল্লাহ কেন মুমিনদের পরীক্ষা করেন? | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

আল্লাহ কেন মুমিনদের পরীক্ষা করেন? | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

অনেক সম্ভাব্য কারণ রয়েছে:

১) আল্লাহ স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন, তিনি আমাদের এই পৃথিবীতে স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন কাটানোর জন্য সৃষ্টি করেননি। আমাদের সৃষ্টির পেছনে তাঁর একটি উদ্দেশ্য রয়েছে। তা হলো, তিনি আমাদের তৈরি করেছেন পরকালের জন্য। পবিত্র কোরানে আছে: “যিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন, যাতে করে তিনি তোমাদের যাচাই করে নিতে পারেন যে কে তোমাদের মধ্যে কর্মে উত্তম।”

[সুরা মুলক, ৬৭:২] আমরা আল্লাহর রহমত অর্জনের জন্য এই পৃথিবীতে বাস করি যা আমাদের জান্নাতে পৌঁছার সোপান। আল্লাহর রহমত পাওয়ার জন্য আমাদের যা-কিছু প্রয়োজন তার সবই করতে হবে। কিন্তু আমরা যত কিছুই করি না কেন, এক জীবনে শুধু ভালো কাজ করলেই জান্নাত অর্জন করা সম্ভব না। আল্লাহ আমাদের ছোট ছোট ভালো কাজগুলো অনেকগুণ বাড়িয়ে দেবেন এবং সেসবের মাধ্যমেই। তিনি তাঁর নেয়ামত দান করবেন, তারপর আমাদেরকে জান্নাত দান করবেন।

আল্লাহ মানবজাতিকে পরীক্ষা করেন। তিনি দেখতে চান মানুষের মধ্যে কারা খাঁটি, কারা তাঁর প্রতি দৃঢ়ভাবে ইমান এনেছে; কারা আখেরাতে (পরকালে) তাঁর বরকত লাভের উপযুক্ত, কারা উপযুক্ত নয়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেন: “মানুষ কি মনে করে যে, “আমরা ইমান এনেছি’ একথা বলেছে বলেই তাদেরকে পরীক্ষা করা ছাড়াই অব্যাহতি দেওয়া হবে? আমি তো তাদের পূর্ববর্তীদেরও পরীক্ষা করেছিলাম।

 

islamiagoln.com google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

আল্লাহ অবশ্যই প্রকাশ করে দেবেন কারা সত্যবাদী এবং তিনি অবশ্যই প্রকাশ করে দেবেন কারা মিথ্যাবাদী।” [সুরা আনকাবুত, ২৯:২-৩] “তোমরা কি মনে কর তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে, যদিও এখনও তোমাদের পূর্বে যারা চলে গেছে তোমরা তাদের অবস্থায় পড়নি? অর্থসংকট ও দুঃখরেশ তাদেরকে স্পর্শ করেছিল, আর তারা এমনই বিচলিত হয়ে পড়েছিল যে, রসুল এবং তাঁর সঙ্গে ইমান আনয়নকারীগণ বলে উঠেছিল, ‘আল্লাহর সাহায্য কখন আসবে?’ জেনে রেখো আল্লাহর সাহায্য তো নিকটেই।” [সুরা বাকারা,2:২১৪}

২) আমরা জানি, পরীক্ষা ও সংগ্রামের মধ্য দিয়েই আল্লাহর নেয়ামত ও সন্তুষ্টি অর্জিত হয়। পবিত্র কোরানে আছে: “অবশ্যই কষ্টের সাথেই স্বস্তি রয়েছে।” [সুরা ইনশিরাহ, ৯৪:৬] আমরা দেখেছি খাবাব ইবনুল আরাত নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে এক সময় নবিজির (সা) কাছে অভিযোগ করেছিলেন, ‘আমরা কতদিন এই অমানুষিক নির্যাতন সহ্য করব?’ নবিজি (সা) জবাবে বলেছিলেন, “প্রকৃতপক্ষে তোমাদের পূর্ববর্তী ইমানদাররা তোমাদের চেয়েও খারাপ ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছিল।

তাঁদের জন্য মাটিতে গর্ত খনন করা হতো এবং ওই গর্তে তাঁদেরকে পুঁতে রেখে করাত দিয়ে তাঁদের মস্তক দ্বিখণ্ডিত করা হতো। তাঁদেরকে গরম লোহার চিরুনি দিয়ে আঁচড়িয়ে শরীরের হাড় পর্যন্ত গোশত ও শিরা উপশিরা সব কিছু ছিন্নভিন্ন করে দিত। এ অমানুষিক নির্যাতনও তাঁদেরকে দ্বীন থেকে বিমুখ করতে পারেনি। আল্লাহর কসম, আল্লাহ এ দ্বীনকে অবশ্যই পূর্ণতা দান করবেন।

 

আল্লাহ কেন মুমিনদের পরীক্ষা করেন? | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

কিন্তু তার আগে একজন নারী মেষপালক সানা থেকে হাদরামাউত পর্যন্ত ভ্রমণ করবে, আল্লাহ ছাড়া সে আর কাউকেই ভয় করবে না, অথবা একটি নেকড়ে তার মেষগুলোকে আক্রমণ করবে। কিন্তু তোমরা (ওই সময়ের অপেক্ষা না করে) তাড়াহুড়া করছ।” এখানে ‘পূর্ববর্তী ইমানদাররা’ বলতে খ্রিষ্টানদের বোঝানো হয়েছে যাঁদের ওপর পৌত্তলিক রোমান শাসকরা নির্যাতন করতেন। রোমান সম্রাট নিরো তো খ্রিষ্টানদের দেহকে ‘লাইট বাল্ব’ হিসেবে ব্যবহার করতেন, তাঁদের গায়ে পেট্রোল দিয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়ে আশেপাশের এলাকাকে আলোকিত করতেন। পৌত্তলিকদের হাতে চরম নিষ্ঠুরতার শিকার হওয়া সত্ত্বেও খ্রিষ্টানরা আল্লাহর ইবাদত করা থেকে বিচ্যুত হয়নি।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা নিশ্চয়ই তাঁর প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করবেন। তবে প্রতিশ্রুতি পূরণের আগে তিনি বান্দার পরীক্ষা নেবেন। আল্লাহ আমাদেরকে এক সময় বিজয় দেবেন, তবে তার আগে আমাদের ধৈর্যধারণ করতে হবে। এমনকি আল্লাহ তাঁর নবিদেরও সৌভাগ্যের চাবি হাতে ধরিয়ে দেননি। তা অর্জন করার জন্য তাঁদেরকে অনেক কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছিল।

৩) এসব লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে সাহাবিরা আমাদের প্রজন্মের মুসলিমদের ওপরে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ রেখেছেন। আল্লাহ নিজেই বলেছেন:  “আল্লাহ তাদের ওপর সন্তুষ্ট এবং তাঁরাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট।” [সুরা তওবা, ১:১০০] শুধু তা-ই না, নবিজিও (সা) বলেছেন, “আমার সাহাবিরা সব প্রজনের মধ্যে সেরা।”

৪) আমরা এইসব প্রকৃত উদাহরণ থেকে দিকনির্দেশনা নিতে পারি। পরীক্ষা ও দুঃখ-দুর্দশার মুখোমুখি হলে আমরা এইসব উদাহরণ থেকে সান্ত্বনা পেতে পারি, সঠিক রোল মডেল খুঁজে পেতে পারি।

আরো পড়ূনঃ

Leave a Comment